সূর্যকে আমরা প্রতিদিন দেখলেও এর গভীর রহস্যগুলো এখনো বিজ্ঞানীদের কাছে বড় বিস্ময়। তবে সেই রহস্যের পর্দা সরিয়ে নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করেছে নাসার ‘পার্কার সোলার প্রোব’। সূর্যের অবিশ্বাস্য রকমের কাছ দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় এই মহাকাশযান এমন এক দৃশ্য ধারণ করেছে, যা আগে কেবল বিজ্ঞানীদের তত্ত্বে সীমাবদ্ধ ছিল।
২০২৪ সালের ক্রিসমাস ইভে (২৪ ডিসেম্বর) পার্কার সোলার প্রোব সূর্যের উপরিভাগ থেকে মাত্র ৩৮ লাখ মাইল দূর দিয়ে অতিক্রম করে। মানব ইতিহাসে কোনো মহাকাশযানের সূর্যের এত কাছে যাওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে যানটি সূর্যের একটি শক্তিশালী বিস্ফোরণ বা ‘সোলার ফ্লেয়ার’ পর্যবেক্ষণ করে। এ সময় সূর্যের অভ্যন্তর থেকে প্রচণ্ড উত্তপ্ত গ্যাস ও শক্তি প্রবল বেগে মহাশূন্যে ছড়িয়ে পড়ে।
বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন, সেই উত্তপ্ত প্লাজমা প্রথমে বাইরের দিকে তীব্র গতিতে ছুটে যায়—যা দেখতে অনেকটা শীতের সকালে মুখ থেকে বের হওয়া শ্বাসের মতো। তবে এর পরের দৃশ্যটি ছিল সবচেয়ে বিস্ময়কর। ছড়িয়ে পড়া সেই বস্তুর একটি বড় অংশ আবার বাঁক নিয়ে সূর্যের দিকেই ফিরে আসে। নাসার বিজ্ঞানীরা জানান, সূর্যের শক্তিশালী চৌম্বকীয় রেখাগুলো ভেঙে গিয়ে পুনরায় যুক্ত হওয়ার (ম্যাগনেটিক রিকানেকশন) ফলে এক ধরনের নতুন বৃত্ত তৈরি হয়। এই চৌম্বকীয় বৃত্তের প্রভাবেই কিছু বস্তু বাইরে ছিটকে যায় এবং বাকি অংশ পুনরায় সূর্যের বুকে ফিরে আসে।
জনস হপকিন্স অ্যাপ্লাইড ফিজিক্স ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানী নুর রাওয়াফি বলেন, "সূর্যের বস্তু এভাবে ফিরে আসতে পারে—এমন ধারণা আমাদের আগে থেকেই ছিল। তবে পার্কার সোলার প্রোবের পাঠানো তথ্যে এটি এত স্পষ্টভাবে দেখা গেছে যা সত্যিই অভূতপূর্ব।"
বিজ্ঞানীরা এই প্রক্রিয়াটিকে ‘করোনাল মাস ইজেকশন’ বা সিএমই হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এ ধরনের বিশাল বিস্ফোরণ পৃথিবীর দিকে ধেয়ে এলে শক্তিশালী ভূ-চৌম্বকীয় ঝড় সৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে স্যাটেলাইট, জিপিএস সেবা, রেডিও যোগাযোগ এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটার সম্ভাবনা থাকে। তবে এর ফলে মেরু অঞ্চলে দেখা যায় মনোরম অরোরা বা আলোর নাচন।
পার্কার সোলার প্রোবের এই নতুন পর্যবেক্ষণ কেবল সূর্যের আচরণ বুঝতে নয়, বরং মহাকাশের আবহাওয়া এবং আগাম সতর্কতা সংকেত তৈরিতে বিজ্ঞানীদের আরও এক ধাপ এগিয়ে দিল।




Comments