ঋণখেলাপি হিসেবে বহাল থাকায় আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ হারাচ্ছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। রোববার (২৮ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ আদালত তাঁর করা আপিল আবেদনের শুনানি নিয়ে পরবর্তী তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ধার্য করায় এই আইনি জটিলতা তৈরি হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের মতে, নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়েল অনুযায়ী মনোনয়ন দাখিলের আগের দিন পর্যন্ত কেউ ঋণখেলাপি থাকলে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন না।
বিচারপতি রেজাউল হকের চেম্বার আদালতে মান্নার আপিল শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। মান্নার পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ও ব্যারিস্টার আহসানুল করিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক সুমন ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. উজ্জ্বল হোসাইন। আদালত আজ কোনো অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ না দিয়ে সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করেছেন।
সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. উজ্জ্বল হোসাইন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, "মনোনয়ন দাখিলের সময়সীমার মধ্যে মান্না ঋণখেলাপি তালিকা থেকে মুক্ত হতে পারেননি। ফলে আইনত তাঁর আর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই।"
এর আগে গত ২১ ডিসেম্বর ইসলামী ব্যাংক মাহমুদুর রহমান মান্নার ঋণ পুনঃতফসিলের আগের দেওয়া অনুমোদন (স্যাংশন লেটার) বাতিল করে দেয়। ব্যাংকের দাবি, পুনঃতফসিলের আবেদনের ক্ষেত্রে নথিপত্র জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর ফলে তাঁর ঋণখেলাপি স্ট্যাটাস বজায় থাকে। পরে তিনি হাইকোর্টে রিট করলে সেটিও খারিজ হয়ে যায়।
যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি বগুড়া-২ আসনটি মাহমুদুর রহমান মান্নার জন্য ছেড়ে দিয়েছিল। তিনি ‘কেটলি’ প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে লড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে মান্না তাঁর ঋণের বিষয়ে জানান, ২০০৭-০৮ সালের দিকে তিনি নিজ এলাকায় একটি হিমাগার (কোল্ড স্টোরেজ) স্থাপন করতে ১০-১২ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। ২০১৪ সালে রাজনৈতিক কারণে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তিনি ব্যবসায়িক কার্যক্রম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। বর্তমানে সুদে-আসলে সেই ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩৬ কোটি টাকায়। তিনি আরও অভিযোগ করেন, তাঁর ব্যবসায়িক অংশীদার হত্যা ও অর্থপাচার মামলায় দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় এই ঋণ পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।
আদালতের রায় পক্ষে না এলে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলে আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। আজকের আদালতের সিদ্ধান্তের পর তাঁর নির্বাচনে অংশগ্রহণের সম্ভাবনা প্রায় নাকচ হয়ে গেল।




Comments