Image description

আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে কিডনি অন্যতম। এটি রক্ত ​​থেকে বর্জ্য পদার্থ ফিল্টার করে, অতিরিক্ত লবণ এবং বিষাক্ত পদার্থ প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেয়। এছাড়াও, এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদন এবং হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। কিডনির এই সকল গুরুত্বপূর্ণ কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা অপরিহার্য।

কেন পানি কিডনির জন্য এত জরুরি?

পানি শুধুমাত্র আমাদের তৃষ্ণা নিবারণ করে না, এটি কিডনির কার্যকারিতার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে কিছু কারণ উল্লেখ করা হলো:
বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন: কিডনি রক্ত ​​থেকে ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন এবং অতিরিক্ত খনিজ পদার্থের মতো বর্জ্য পদার্থ ফিল্টার করে। পানি এই বর্জ্য পদার্থগুলোকে প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দিতে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত পানি পান না করলে এই বর্জ্য পদার্থগুলো শরীরে জমা হতে পারে, যা কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে।
কিডনি পাথর প্রতিরোধ: কিডনি পাথর একটি বেদনাদায়ক অবস্থা যা প্রস্রাবে খনিজ পদার্থের ঘনত্ব বেড়ে গেলে তৈরি হয়। পর্যাপ্ত পানি পান করলে প্রস্রাব পাতলা থাকে, যা খনিজ পদার্থগুলোকে একত্রিত হয়ে পাথর তৈরি করতে বাধা দেয়। যারা পূর্বে কিডনি পাথরে ভুগেছেন, তাদের জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
কিডনির রক্ত ​​প্রবাহ বজায় রাখা: পানি শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা কিডনিতে পর্যাপ্ত রক্ত ​​প্রবাহ নিশ্চিত করে। ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা কিডনিতে রক্ত ​​প্রবাহ কমিয়ে দেয়, যা কিডনির কার্যকারিতাকে ব্যাহত করতে পারে।
শারীরিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ: পানি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি কিডনির মতো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোকেও সঠিকভাবে কাজ করতে সহায়তা করে।

প্রতিদিন কতটুকু পানি পান করা উচিত?
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০ গ্লাস (প্রায় ২-২.৫ লিটার) পানি পান করা উচিত। তবে এই পরিমাণ কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে:
শারীরিক কার্যকলাপ: যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন বা কায়িক পরিশ্রম করেন, তাদের স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পানি পান করা প্রয়োজন। ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে অনেক পানি বেরিয়ে যায়, যা পূরণ করা জরুরি।
জলবায়ু: গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় শরীর থেকে বেশি ঘাম হয়, তাই এই সময়ে বেশি পানি পান করা আবশ্যক।
স্বাস্থ্য অবস্থা: জ্বর, ডায়রিয়া, বমি বা অন্যান্য অসুস্থতার ক্ষেত্রে শরীর থেকে তরল পদার্থ বেশি বেরিয়ে যায়, তাই এ সময় অতিরিক্ত পানি পান করা উচিত। কিছু নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যগত পরিস্থিতি (যেমন: হার্ট ফেইলিউর বা কিডনি রোগ) থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পানির পরিমাণ নির্ধারণ করা উচিত।
গর্ভধারণ ও স্তন্যপান: গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের শরীরের পানির চাহিদা বেশি থাকে।

পানি পানের সহজ কিছু টিপস:
নিয়মিত বিরতি: তৃষ্ণা পেলেই শুধু নয়, সারাদিন অল্প অল্প করে পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
খাবারের সাথে পানি: প্রতিটি খাবারের সাথে এক গ্লাস পানি পান করুন।
সকালে শুরু করুন: সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস পানি পান করে দিনের শুরু করুন।
কাজের সময়: কর্মক্ষেত্রে বা অধ্যয়নের সময় নিজের কাছে পানির বোতল রাখুন যাতে সহজেই পানি পান করতে পারেন।
ফল ও সবজি: পানি সমৃদ্ধ ফল ও সবজি (যেমন শসা, তরমুজ, কমলা) খাদ্যতালিকায় যোগ করুন।

সুস্থ কিডনি একটি সুস্থ জীবনের জন্য অপরিহার্য। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করে আপনি আপনার কিডনিকে সুরক্ষিত রাখতে পারেন এবং বিভিন্ন রোগ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারেন। মনে রাখবেন, শরীরের কথা শুনুন এবং তৃষ্ণা লাগার আগেই পানি পান করুন।