উন্নত জীবনের আশায় কিংবা ভালোবাসার টানে অনেকেই বিদেশে পাড়ি জমান। নিজ দেশের পাশাপাশি অন্য দেশের পাসপোর্ট বা নাগরিকত্ব থাকাটা বর্তমান বিশ্বে ক্যারিয়ার ও ভ্রমণের ক্ষেত্রে বেশ সুবিধাজনক। পড়াশোনা বা কাজের সূত্রে বিদেশ ভ্রমণে গিয়ে ভিনদেশি নাগরিকদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠা এবং তা বিয়ে পর্যন্ত গড়ানো এখন আর নতুন কিছু নয়।
বিশ্বের এমন কিছু দেশ রয়েছে, যেখানে স্থানীয় নাগরিককে বিয়ে করলেই আপনি খুব সহজে পেয়ে যেতে পারেন সেই দেশের বৈধ নাগরিকত্ব। তবে প্রতিটি দেশেরই নিজস্ব কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন ৬টি দেশ সম্পর্কে, যেখানে বিয়ে করলেই মিলবে নাগরিকত্ব।
স্পেন
দক্ষিণ ইউরোপের অন্যতম বৃহত্তম ও সুন্দর দেশ স্পেন। দেশটির অভিবাসন আইন অনুযায়ী, কোনো স্প্যানিশ নাগরিককে বিয়ে করে তার সঙ্গে মাত্র এক বছর বসবাস করলেই আপনি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
সুবিধা: স্পেনের নাগরিকত্ব পেলে আপনি লাতিন আমেরিকা, ফিলিপাইন ও পর্তুগালসহ বহু দেশে দ্বৈত নাগরিকত্বের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
শর্ত: আবেদনের জন্য বিয়ের বৈধ সনদ এবং স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে বসবাসের প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে।
সুইজারল্যান্ড
সুইজারল্যান্ড সাধারণত অভিবাসন নীতির ক্ষেত্রে বেশ কঠোর, তবে বিয়ের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রক্রিয়াটি এখানে তুলনামূলক সহজ ও দ্রুত।
নিয়ম: স্বামী বা স্ত্রী যদি সুইস নাগরিক হন এবং আপনারা সুইজারল্যান্ডে বসবাস করেন, তবে মোট পাঁচ বছর বসবাসের পর (এর মধ্যে অন্তত তিন বছর বিবাহিত অবস্থায়) নাগরিকত্বের আবেদন করা যায়। আর যদি দেশের বাইরে থাকেন, তবে বিয়ের বয়স ছয় বছর পূর্ণ হলেই আবেদন করতে পারবেন।
শর্ত: সুইজারল্যান্ডের ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে, কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড থাকা যাবে না এবং বৈধ দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। এটি আপনাকে ইউরোপে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ করে দেবে।
তুরস্ক
ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ দেশ তুরস্ক। এখানে বিয়ের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়া বেশ সুবিধাজনক।
নিয়ম: তুর্কি নাগরিককে বিয়ের পর টানা তিন বছর সংসার করলেই নাগরিকত্ব পাওয়া যায়।
সুবিধা: তুরস্কের পাসপোর্ট বেশ শক্তিশালী। দেশটির নাগরিক হলে আপনি বিশ্বের ১১০টিরও বেশি দেশে 'ভিসা ফ্রি' বা 'ভিসা অন অ্যারাইভাল' সুবিধায় ভ্রমণের সুযোগ পাবেন।
আর্জেন্টিনা
লাতিন আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনাও বিয়ের মাধ্যমে দ্রুত নাগরিকত্ব প্রদান করে।
নিয়ম: আর্জেন্টিনার কোনো নাগরিককে বিয়ে করার মাত্র দুই বছর পরেই আপনি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
শর্ত: বৈধ বিয়ের প্রমাণের পাশাপাশি স্প্যানিশ ভাষায় সাধারণ দক্ষতা থাকতে হবে। এছাড়া আবেদনকারীর কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড বা পুলিশ কেস থাকা যাবে না।
মেক্সিকো
উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকোতেও রয়েছে সহজ অভিবাসন নীতি।
নিয়ম: মেক্সিকান কোনো নাগরিককে বিয়ে করে তার সঙ্গে দুই বছর বসবাস করলেই দেশটির নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
শর্ত: এই সুযোগ পেতে হলে আপনাকে স্প্যানিশ ভাষার মৌলিক জ্ঞান প্রমাণ করতে হবে। সেই সঙ্গে লাগবে বিয়ের বৈধ সনদ ও একসঙ্গে বসবাসের প্রমাণ।
কেপ ভার্দে
পশ্চিম আফ্রিকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা দ্বীপরাষ্ট্র কেপ ভার্দে। আটলান্টিক মহাসাগরের বুকে অবস্থিত এই দেশটি বিয়ের মাধ্যমে নাগরিকত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে উদার।
নিয়ম: দেশটির কোনো নাগরিককে বৈধভাবে বিয়ে করার পরপরই আপনি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এখানে বসবাসের নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমার কড়াকড়ি নেই।
সতর্কতা ও পরামর্শ
বিয়ের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ থাকলেও প্রতিটি দেশের আইনি প্রক্রিয়া ভিন্ন। তাই আবেদনের আগে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস বা অভিজ্ঞ অভিবাসন আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে সঠিক কাগজপত্র প্রস্তুত করা জরুরি। ভুয়া বিয়ে বা জালিয়াতির আশ্রয় নিলে নাগরিকত্ব বাতিলসহ আইনি শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে।




Comments