Image description

বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যার ঘ্রাণে পাঠকরা ক্রয় করছেন বিষয়ভিত্তিক বই। দিনের আলো বিদায়ের সুরে হাঁটছে পশ্চিমে। এমন মুহূর্তে দেখা হয় মিতুর সঙ্গে। হাতে ব্যাগ দেখেই বোঝা যাচ্ছে- তার পড়ার পরিধি কত বিস্তৃত। বাঙালির চেতনার মিলনমেলা অমর একুশে বইমেলা নিয়ে মিতুর মন্তব্য একেবারে আলাদা। 

তিনি বলেন- ‘জীবনের বড় প্রাপ্তি প্রতিবছর বইমেলায় এসে নির্বাচিত বই কিনতে পারা। অনেকেই শুধু ঘুরতে বা ছবি তুলতে আসেন, এসব আমার মোটেও ভালো লাগে না। জ্ঞানার্জন ও জ্ঞান ছড়িয়ে দিতেই বইমেলার আয়োজন হয়, মেলায় আসার অর্থ বই দেখা ও কেনা, যা আমি করে থাকি। আড্ডাও দিয়ে থাকি কিন্তু বইকেন্দ্রিক। আশা করছি- পরিবর্তিত দেশের মানুষ বই পড়বে।’ 

বইমেলার চতুর্থ দিনে একজন পাঠকের উপলব্ধি এমন হওয়া মানে আলো দেখা- জ্ঞানের আলোয় সমাজ আলোকিত হওয়ার স্বপ্ন দেখা। এমন চিন্তা প্রকাশকদেরও স্বপ্ন দেখায়।

একুশের শাণিত চেতনার বইমেলা শুধু বই বিকিকিনির প্রাঙ্গণই নয়, এ যেন বইয়ের উৎসবের মিলনমেলা। এই মিলনমেলার একই প্রাঙ্গণে পাওয়া যাচ্ছে গল্প, কবিতা, উপন্যাস, সায়েন্সফিকশন,  থ্রিলার, রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ, শিশুতোষ, ভ্রমণ, জীবনী, অনুবাদ ও ধর্মীয় বইসহ সব ধরনের বই। আবার সব ধরনের বইয়ের মধ্যে প্রকাশনার দিকে এগিয়ে থাকে কবিতার বই ও বিক্রিতে এগিয়ে থাকে উপন্যাস। 

বরাবরের মতো এবারের মেলায়ও উপন্যাস বেশি বিক্রি হচ্ছে। পাঠক চাহিদা বিবেচনায় উপন্যাস প্রকাশেই প্রকাশকদের আগ্রহের মাত্রাটা একটু বেশি। পাঠক চাহিদার নিরীখে এবারের মেলায় এখন পর্যন্ত প্রকাশিত ও প্রকাশের অপেক্ষায় থাকাসহ উপন্যাসের সংখ্যা প্রায় হাজারের উপরে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলো হলো- অনন্যা প্রকাশিত জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের ‘রহস্যময় জঙ্গলবাড়ি’ ও অন্যপ্রকাশ থেকে একই লেখকের আরেক উপন্যাস ‘পরাধীনতা’, কথা প্রকাশ এনেছে হরিশংকর জলদাসের ‘শূর্পণখা’, মাহরীন ফেরদৌসের ‘জলজ লকার’, লুনা রুশদীর ‘আনবাড়ি’, ইমতিয়ার শামীমের ‘শঙ্খগহন সলপকাল’, মামুন হুসাইনের ‘স্বরচিত আত্মার পরিত্রাণ’, আহমাদ মোস্তফা কামালের ‘উপন্যাস সংগ্রহ’, নাসির আলী মামুনের ‘হেম-বেহাগের মহারাজা’, ইকবাল আখতারের ‘গণপতি’, রেজানুর রহমানের ‘নায়ক প্রতিনায়ক’,G

মিজান পাবলিশার্স এনেছে মোশারফ হোসেন শাজাহানের ‘উপন্যাস সমগ’, অক্ষর প্রকাশনী এনেছে রশীদ হায়দারের ‘নষ্ট জোছনায় এ কোন অরণ্য’, সেলিনা হোসেনের ‘মার্গের নীল পাখি’, মঈনুল আহসান সাবেরের ‘জ্যোতির্ময়ী তোমাকে বলি’, শহীদুল্লাহ সিরাজীর ‘মায়াবী প্লাবন’, সিরাজ উদ্দিন সাথীর ‘করোনাকালের দিবা-রাত্রি’, রফিকুর রশীদের ‘চার দেয়ালের ঘর’, জেড আলমের ‘ফেইক আইডি’, মেহেরুন নেছা রুমার ‘নয়নসুখ’, জোনাকী প্রকাশনী এনেছে রুবিনা আলমগীরের ‘দীর্ঘশ্বাস’, পাঞ্জেরী প্রকাশ করেছে শাহাব আহমদের ‘পেরস্ত্রোইকা মস্কো ও মধু’, তপন বাগচীর ‘শেষ দৃশ্যের আগে’, কিঙ্কর আহসানের ‘বিবিয়ানা’, ইকবাল খন্দকারের ‘কবিরদের নিখোঁজ রহস্য’, আলম শাইনের ‘নরখাদকের দ্বীপ’, মনি হায়দারের ‘উড়িতেছে সোনার ঘোড়া’, নিমগ্ন দুপুরের ‘হোয়াইট ম্যাজিক: লাইফ অফ ডেথ’,G

ঐতিহ্য এনেছে শফিক রেহমানের ‘ভালোবাসা’, হাসনাত আবদুল হাইয়ের ‘লাগে উরাধুরা’, পিনাকী ভট্টাচার্যের ‘ফুল কুমারী’, আফতাব হোসেনের ‘দ্বিচারী মন’, নিয়াজ মাহমুদের ‘লীলাময়ী করপুটে তোমাদের’, মুম রহমানের ‘পাঁচজন ফজলু’, শাহাদত হোসেন সুজনের ‘মাধবীলতা’, সময় এনেছে মোস্তফা কামালের ‘বিষাদ বসুধা’, দীপু মাহমুদের ‘নিঃসঙ্গ নটী’, সুমী শারমিনের ‘মেঘ বরষা ঝুম’, শোভা প্রকাশ থেকে মোস্তফা মননের ‘শাহজালাল’, অবসর প্রকাশনী এনেছে সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘ঢোঁড়াই চরিত মানস (অখণ্ড)’, ও ‘জাগড়ি’, এবং ড. সাজিদ বিন দোজার ‘ক্রাস্টেসিয়ান গ্রাফিক্স নোভেল’, আদর্শ এনেছে কামরুল হাসান রাহাতের ‘জং বাহাদূর’, গালীব বিন মোহাম্মদের ‘ফেরারি রাজপুত্র’, মহিউদ্দিন খালেদের ‘মারজান’, মাহবুব মোর্শেদের ‘স্যাপিওসেক্সুয়াল’, মুরাদ কিবরিয়ার ‘প্রেম প্রার্থনা মৃত্যু’, রকিবুল হাসানের ‘কল্যাণী ২.০’, সালাহ উদ্দিন শুভ্রর ‘আজাদি’, ইত্যাদি।

উপন্যাসের চাহিদার বিষয়ে কথা প্রকাশের ব্যবস্থাপক শেখ এ এম ইউনুস বলেন, উপন্যাসের প্রতি সবসময় পাঠকদের আগ্রহ একটু বেশি থাকে। তিনি জানান, তাদের প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রকাশিত হরিশংকর জলদাসের ‘শূর্পনখা’ উপন্যাসটির বিক্রি ভালো।

ঐতিহ্য প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজল বলেন,  আমাদের প্রকাশনার শফিক রেহমানের ‘ভালোবাসা’, হাসনাত আবদুল হাইয়ের ‘লাগে উরাধুরা’, পিনাকী ভট্টাচার্যের ‘ফুল কুমারী’, এই তিনটি উপন্যাসের বিক্রি আশাব্যঞ্জক।

শোভা প্রকাশের স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান জানান, তার প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রকাশিত মোস্তফা মননের ‘শাহজালাল’ উপন্যাসটির বিক্রির অবস্থা খুবই ভালো।