Image description

নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে অংশ নিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সফর ঘিরে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে সফরসঙ্গীদের সংখ্যা ও গঠন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সফর-পুস্তিকায় উল্লেখিত সফরসঙ্গীর সংখ্যা ৬২ জন হলেও সরকারি নথিতে এই সংখ্যা ১০৪ জন। এই তালিকায় উপদেষ্টা, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা এবং তিনটি রাজনৈতিক দলের ছয়জন নেতা রয়েছেন। নির্দলীয় অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে রাজনৈতিক নেতাদের সফরে অন্তর্ভুক্তি এবং বড় বহর নিয়ে সমালোচনা উঠেছে।

সফরসঙ্গীদের তালিকা ও রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব

সরকারি নথি অনুযায়ী, সফরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রয়েছেন চার উপদেষ্টা: আসিফ নজরুল, মো. তৌহিদ হোসেন, মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ও আদিলুর রহমান খান। এছাড়া বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, ১৯ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং ৪৭ জন সরকারি কর্মকর্তা রয়েছেন।

রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে সফরে অংশ নিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সদস্য মোহাম্মদ নকিবুর রহমান (যুক্তরাষ্ট্র থেকে যুক্ত), এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে রাজনৈতিক দলের নেতাদের সফরে যুক্ত করা নিয়ে সমালোচনা দেখা দিয়েছে। অনেকে মনে করছেন, এটি অতীতের রাজনৈতিক সরকারের বড় বহর নিয়ে বিদেশ সফরের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার প্রতিফলন।

দুই তালিকা: পুস্তিকা বনাম সরকারি নথি

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সফরের ক্ষেত্রে দুটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়। সফর-পুস্তিকায় শীর্ষ নেতার সঙ্গে একই ফ্লাইটে যাওয়া ব্যক্তিদের নাম থাকে, যা এবার ৬২ জন। অন্যদিকে, সরকারি তালিকায় ভিন্ন ফ্লাইটে আসা বা অন্য দূতাবাস থেকে অস্থায়ীভাবে যুক্ত কর্মকর্তাদের নামও অন্তর্ভুক্ত হয়, যা এবার ১০৪ জন। উদাহরণস্বরূপ, এবার কাঠমান্ডু থেকে বিশেষ দায়িত্বে যুক্ত হয়েছেন কূটনীতিক শোয়েব আব্দুল্লাহ, যিনি পূর্বে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনে কর্মরত ছিলেন।

তুলনামূলক বিশ্লেষণ: অতীতের সফর বনাম বর্তমান

গত বছরের (২০২৪) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী ছিলেন ৫৭ জন। তখন সরকার ব্যয় সংকোচনের অঙ্গীকার করলেও এবার সফরসঙ্গীর সংখ্যা বেড়ে ১০৪-এ পৌঁছেছে। অতীতে রাজনৈতিক সরকারের আমলে জাতিসংঘ সফরে ১৫০ থেকে ২০০ জন পর্যন্ত সফরসঙ্গী যেতেন। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৯ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরে ২৯২ জন সফরসঙ্গী ছিলেন। তবে ২০০৭-০৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সফরের বহর ছিল তুলনামূলকভাবে ছোট।

হেনস্তার অভিযোগ ও মিশনের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন

এবারের সফরে রাজনৈতিক নেতাদের নিউইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দরে হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সমালোচকরা মনে করছেন, সফরের ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে মিশনের ব্যর্থতা এই ঘটনার জন্য দায়ী।

সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়া

বড় বহর এবং রাজনৈতিক নেতাদের সফরে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে সমালোচনা তীব্র হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে ব্যয় সংকোচন ও স্বচ্ছতার প্রতিশ্রুতি থাকলেও এই সফর পূর্ববর্তী রাজনৈতিক সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। সফরসঙ্গীদের তালিকা ও ব্যয় নিয়ে স্বচ্ছতার দাবি উঠেছে জনমনে।