Image description

আগামী বছর হজ পালনের খরচ কিছুটা কমছে, বিশেষ করে বিমানভাড়া হ্রাসের কারণে। সরকার ২০২৬ সালের জন্য তিনটি নতুন হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যেখানে সর্বনিম্ন খরচ ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৬৭ হাজার ১৬৭ টাকা।

রোববার ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন এই নতুন হজ প্যাকেজগুলো ঘোষণা করেন। গত বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় দুটি প্যাকেজ থাকলেও এবার তিনটি প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে।

খরচ কমার কারণ ও নতুন সংযোজন: যদিও বিমানভাড়া কমেছে, সৌদি সরকার স্বাস্থ্যবিমার পরিমাণ ১৩০ সৌদি রিয়াল (প্রায় ৪ হাজার ২৭০ টাকা) বৃদ্ধি করেছে। এছাড়া, মিনা ও আরাফায় তাঁবু ভাড়া ৪.২ শতাংশ বেড়েছে এবং নুসুক মাসার প্ল্যাটফর্মে ‘দমে শোকর’ বাবদ ৭২০ সৌদি রিয়াল (২৩ হাজার ৬৫২ টাকা) জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যা এবারই প্রথম হজ প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত হলো। সৌদি রিয়ালের বিনিময় হারও গত বছরের ৩২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বেড়ে ৩২ টাকা ৮৫ পয়সা হয়েছে। এই সব বিষয় বিবেচনা করে ২০২৬ সালের প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে।

সরকারি ব্যবস্থাপনায় তিনটি প্যাকেজ-

হজ প্যাকেজ-১ (বিশেষ): এই প্যাকেজের আওতায় হজযাত্রীরা মক্কায় হারাম শরীফের ৭০০ মিটারের মধ্যে এবং মদিনায় মারকাজিয়া বা সেন্ট্রাল এরিয়ায় আবাসন সুবিধা পাবেন। অ্যাটাচড বাথরুমসহ একরুমে সর্বোচ্চ পাঁচজনের থাকার ব্যবস্থা থাকবে। মিনায় জোন-২ এ তাঁবু এবং মিনা-আরাফায় ‘ডি+’ ক্যাটাগরির সার্ভিসসহ মোয়াল্লেম কর্তৃক খাবার সরবরাহ করা হবে। এই প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৯০ হাজার ৫৯৭ টাকা।

হজ প্যাকেজ-২: এই প্যাকেজের হজযাত্রীরা মক্কায় হারাম শরীফের ১.২ কিমি থেকে ১.৮ কিমি এর মধ্যে এবং মদিনায় মারকাজিয়া বা সেন্ট্রাল এরিয়ায় আবাসন সুবিধা পাবেন। অ্যাটাচড বাথরুমসহ একরুমে সর্বোচ্চ ছয়জনের থাকার ব্যবস্থা থাকবে। মিনায় জোন-২ এ তাঁবু এবং মিনা-আরাফায় ‘ডি’ ক্যাটাগরির সার্ভিসসহ মোয়াল্লেম কর্তৃক খাবার সরবরাহ করা হবে। এই প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৮৮১ টাকা।

প্যাকেজ-১ ও প্যাকেজ-২ এ নির্ধারিত অর্থ পরিশোধ সাপেক্ষে মক্কা ও মদিনায় ২ ও ৩ সিটের রুম আপগ্রেডেশন এবং শর্ট প্যাকেজ (২২-৩০ দিন) সুবিধা গ্রহণ করা যাবে।

হজ প্যাকেজ-৩ (সাশ্রয়ী): এটি নতুন সংযোজন এবং সরকারি মাধ্যমের জন্য সাশ্রয়ী হজ প্যাকেজ। এই প্যাকেজের হজযাত্রীদের আবাসন হবে মক্কায় আজিজিয়া এলাকায় এবং মদিনায় মারকাজিয়া এলাকার বাইরে। একরুমে সর্বোচ্চ ছয়জনের থাকার ব্যবস্থা থাকবে। মিনায় জোন-৫ এ তাঁবু এবং মিনা-আরাফায় ‘ডি’ ক্যাটাগরির সার্ভিসসহ মোয়াল্লেম কর্তৃক খাবার সরবরাহ করা হবে। হারাম শরীফে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য যাতায়াতের নিমিত্ত এসি বাসের ব্যবস্থা থাকবে। এই প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৬৭ হাজার ১৬৭ টাকা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ও মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলো বহু বছর ধরে আজিজিয়া এলাকাতেই হজযাত্রীদের রাখে। বাংলাদেশের হজযাত্রীদের দীর্ঘদিন ধরে যেখানে রাখা হতো, সেই হোটেলগুলো ভেঙে ফেলায় আগামীতে বাংলাদেশের হজযাত্রীদেরও আজিজিয়া এলাকায় রাখার প্রয়োজন হবে।

বেসরকারি ব্যবস্থাপনার প্যাকেজ: চলতি বছরের মতো আগামী বছরও বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের জন্য একটি প্যাকেজ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এই প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৯ হাজার ১৮৫ টাকা। হজ এজেন্সিগুলো এই নির্ধারিত মূল্যের নিচে কোনো প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে না এবং সরকার অনুমোদিত এই প্যাকেজ গ্রহণ করে এজেন্সিগুলো অতিরিক্ত দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য: প্রত্যেক হজযাত্রীকে খাবার বাবদ প্রতিদিন ন্যূনতম ৩৫ সৌদি রিয়াল (নিজ দায়িত্বে খাবার ক্রয়ের জন্য) সঙ্গে নিতে হবে।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২০২৬ সালের ২৬ মে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে।

এ বছর বাংলাদেশ থেকে সম্ভাব্য ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ পালন করতে পারবেন।

গত ২৭ জুলাই থেকে হজের প্রাথমিক নিবন্ধন শুরু হয়েছে এবং সৌদি সরকারের রোডম্যাপ অনুসারে আগামী ১২ অক্টোবর হজের নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ হবে। ১২ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সের শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ব্যক্তি ২০২৬ সালের হজে গমন করতে পারবেন। ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা জমা দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধন সম্পন্ন করা যাবে।

আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্যাকেজ মূল্যের সমুদয় অর্থ আবশ্যিকভাবে জমা প্রদান করতে হবে।

আগামী ৯ নভেম্বর হজচুক্তি সম্পাদিত হবে।

২০২৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাড়িভাড়া ও পরিবহন চুক্তি সম্পাদন করতে হবে।

৮ ফেব্রুয়ারি থেকে হজ ভিসা ইস্যুর কার্যক্রম শুরু হবে।

হজ ফ্লাইট শুরু হবে ১৮ এপ্রিল।