
২০২৬ সালের শুরু থেকেই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নতুন বেতন কাঠামোতে বেতন পাবেন। অন্তর্বর্তী সরকারই গেজেটের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করবে এবং এর জন্য পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের জন্য অপেক্ষা করা হবে না। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটেই এ খাতে প্রয়োজনীয় তহবিল বরাদ্দ রাখা হবে।
বাস্তবায়নের সময়সীমা ও বাজেট বরাদ্দ: মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আগামী বছরের মার্চ বা এপ্রিলে নতুন পে স্কেল কার্যকর করতে হলে চলতি বাজেটেই অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। ডিসেম্বরে বাজেট সংশোধন শুরু হলে সেখানে এই বিধান যুক্ত করা হবে।
পে কমিশনের সুপারিশ ও পরিবর্তনসমূহ: গত ২৪ জুলাই সরকারি কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণে একটি পে কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খান জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দেওয়া হবে।
কমিশনের একজন সদস্য জানান, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন গ্রেড এবং গড়ে কী হারে বেতন বাড়বে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে বর্তমান সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত ১০:১, যা নতুন কাঠামোতেও ৮:১ থেকে ১০:১-এর মধ্যে থাকবে। প্রতিবেশী দেশগুলোতেও এ ধরনের অনুপাত প্রচলিত।
ভাতা বৃদ্ধি ও অন্যান্য সুবিধা: কমিশন চিকিৎসা ও শিক্ষা ভাতা বাড়ানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বর্তমানে একজন কর্মচারী চাকরির শুরু থেকে অবসর পর্যন্ত মাসে ১,৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। কমিশন এই ভাতা বাড়ানোর পাশাপাশি অবসরোত্তর সময়ের জন্যও বাড়তি সুবিধা রাখার পরিকল্পনা করছে। সন্তানদের শিক্ষা ভাতাও বাড়ানোর সুপারিশ থাকবে।
সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল বাতিল এবং পদোন্নতির প্রক্রিয়া সহজীকরণ: ২০১৫ সালের ড. ফরাসউদ্দিন কমিশনের মতো এবারও সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল বাতিল করে পদোন্নতির প্রক্রিয়া আরও সহজ করার প্রস্তাব আসতে পারে। বর্তমানে প্রায় ১৪ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী জাতীয় বেতন কাঠামোর আওতায় বেতন পাচ্ছেন।
অন্যান্য খাতের সঙ্গে সামঞ্জস্য: রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, বিদ্যুৎ কোম্পানি, সশস্ত্র বাহিনী ও বিচার বিভাগের আলাদা কাঠামো রয়েছে। কমিশন বলছে, এগুলোকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে জাতীয় কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার প্রস্তাব দেওয়া হবে।
বেসরকারি খাতে প্রভাব ও সমন্বয়: নতুন কাঠামো বেসরকারি খাতে চাপ সৃষ্টি করতে পারে, উল্লেখ করে কমিশন অক্টোবর মাসে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করবে। ইতোমধ্যে সরকার পোশাকসহ ৪৫টি খাতে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করেছে। কমিশন সুপারিশ করবে, এসব খাতের মজুরি সরকারি বেতন কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে সমন্বয় করতে।
বিশেষ প্রণোদনা ও মেধাবীদের আকর্ষণ: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী ও গবেষকদের জন্য নতুন কাঠামোয় বিশেষ প্রণোদনা ভাতার প্রস্তাব থাকবে। কমিশনের মতে, এসব খাতে তরুণদের আগ্রহ কমে যাওয়ায় উদ্ভাবন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বর্তমান পরিস্থিতি ও বাজেট বরাদ্দ: বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের কাঠামো অনুযায়ী বেতন পাচ্ছেন। দেশে প্রায় ১৫ লাখ সরকারি কর্মচারী রয়েছেন; সশস্ত্র বাহিনী, ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের যুক্ত করলে এই সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ২৪ লাখে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০২৪ সালের নভেম্বরে ভাতা সংস্কার আলোচনা শুরু হয়। চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ১০ শতাংশ বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতার জন্য ৮৪ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা আগের বছরের ৮২ হাজার ৯৭৭ কোটির চেয়ে বেশি।
Comments