
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক বলেছেন, আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (আইসিএও) প্রোটোকল মেনেই হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সব কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। তিনি জানান, বিমানবন্দরে সপ্তাহে এক দিন ফায়ার ড্রিল (অগ্নিনির্বাপণ মহড়া) করা হয় এবং সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের পরও আইসিএওর সব নিয়ম মেনে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরায় বেবিচক ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক বলেন, "আগুনের কারণে বিমানবন্দরের কার্গো অপারেশন এক দিনের জন্যও বন্ধ রাখা হয়নি। ৯ নম্বর গেট দিয়ে কার্যক্রম চালু আছে।"
বেবিচক চেয়ারম্যান প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন, "আগুনের সূত্রপাত কোনো আমদানি কুরিয়ার সার্ভিস থেকে হয়েছে।" তিনি উল্লেখ করেন যে, রানওয়ের অ্যাপ্রনে পণ্যসামগ্রী স্তূপ করে রাখা হয়েছিল, যার কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশে সমস্যা হয়। এর দায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, ঢাকা কাস্টম হাউস ও সিঅ্যান্ডএফ (ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং) এজেন্টদের। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ২১ দিনের মধ্যে পণ্য অপসারণের কথা থাকলেও, সেখানে বছর ধরে পণ্য পড়ে থাকে। তবে তিনি তদন্তের স্বার্থে কোনো সংস্থার ওপর সরাসরি দায় দিতে চান না।
বেবিচকের অনুমতি না পাওয়ায় ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের কাজ করতে দেরি হয়েছে এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, "আমি তদন্ত করে দেখেছি, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি, কিন্তু কেউ বলেনি ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভেতরে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে। তারপর কোনো কর্তৃপক্ষ যদি এ অভিযোগ করে, তাহলে আমি সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেবো। এ অভিযোগ যারা করছেন, সেটা সত্যি নয়।"
কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্সটি বেবিচকের হলেও ভেতরের কার্যক্রম পরিচালনা করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, ঢাকা কাস্টম হাউস ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা বলে জানান চেয়ারম্যান।
মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক আরও বলেন, "আগুনের ঘটনায় তদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে বিমানবন্দরের ভাবমূর্তির কোনো ক্ষতি হবে না।"
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, "আর্থিক বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে নতুন কার্গো ভবন বুঝে নেওয়া যাচ্ছে না। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান যে টাকা দাবি করছে, তার সঙ্গে তাদের প্রায় হাজার কোটি টাকার একটি ব্যবধান রয়েছে।"
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বেবিচকের সদস্য, (পরিচালনা ও পরিকল্পনা) এয়ার কমডোর আবু সাঈদ মেহবুব খান, সদস্য (প্রশাসন) অতিরিক্ত সচিব এস এম লাবলুর রহমান, সদস্য (অর্থ), যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ নাজমুর হক, সদস্য নিরাপত্তা এয়ার কমডোর মো.আসিফ ইকবাল, সদস্য এটিএম এয়ার কমডোর মো. নুর–ই আলম, সদস্য (ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড এন্ড রেগুলেশন) এয়ার কমডোর মো. মুকিত–উল–আলম প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে (পণ্য রাখার স্থান) গত শনিবার বেলা সোয়া দুইটার দিকে আগুন লাগে। আগুন পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয় ২৬ ঘণ্টা পর। এ ঘটনায় কোনো প্রাণহানি না হলেও, প্রাথমিক হিসাবে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার পণ্য ও কাঁচামাল পুড়ে গেছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। তাঁরা বলছেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।
Comments