
দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে এবং উৎপাদনশীল কর্মশক্তি গড়ে তুলতে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের মধ্যকার ব্যবধান দূর করার জন্য সম্মিলিত উদ্যোগের আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে সাজেদা ফাউন্ডেশন আয়োজিত “শ্রেণিকক্ষ থেকে ক্যারিয়ার: বাংলাদেশের ভবিষ্যতকে সমৃদ্ধিকরণ” শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এই আহ্বান জানানো হয়।
আলোচনায় সরকারি নীতিনির্ধারক, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এবং উন্নয়ন অংশীদাররা অংশ নেন। বক্তারা শিক্ষার মান উন্নয়ন, কৌশলগত অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা এবং সরকারি-বেসরকারি খাত থেকে উদ্ভাবনী তহবিল ও সহায়তার মাধ্যমে এই ব্যবধান কমানোর পরামর্শ দেন।
শিক্ষার মানই পিছিয়ে পড়ার কারণ
সাজেদা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ও সাবেক কূটনীতিক ফারুক সোবহান বলেন, “শিক্ষার নিম্নমানের কারণে বাংলাদেশ অনেক দেশের তুলনায় পিছিয়ে পড়েছে, যারা একসময় অর্থনৈতিকভাবে আমাদের থেকে দুর্বল ছিল। চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলো মানসম্মত শিক্ষা ও সকলের জন্য শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করে আমাদের ছাড়িয়ে গেছে।” তিনি শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।
তরুণ জনগোষ্ঠীকে ক্ষমতায়নের সুযোগ
সাজেদা ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদা ফিজ্জা কবির বলেন, “বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম তরুণ জনগোষ্ঠী নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের যুবসমাজকে প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও মানসিকতা দিয়ে গড়ে তুলতে পারলে তারা আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ হবে। কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থা যদি আজকের বাস্তবতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে না চলে, তাহলে আমাদের জনমিতি লভ্যাংশ বোঝায় পরিণত হতে পারে।”
প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষার গণতন্ত্রীকরণ
খান একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সাল খান ভার্চুয়ালি বক্তব্যে বলেন, “উচ্চমানের শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের প্রবেশাধিকার এবং শিক্ষকদের নিজস্ব ধারায় শিক্ষাদানের ক্ষমতা দেওয়া হলে ব্যাপক রূপান্তর সম্ভব। বাংলাদেশের উদ্ভাবন, অন্তর্ভুক্তি ও শিক্ষকদের নিষ্ঠার সমন্বয়ে এই পরিবর্তনের নেতৃত্ব দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।” তিনি খান একাডেমির সাফল্যকে স্থানীয় অংশীদারিত্ব ও বৈশ্বিক সহযোগিতার একটি অনুপ্রেরণামূলক উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
পাইলট প্রকল্পের সাফল্য
আলোচনায় খান একাডেমি-পরিচালিত একটি পাইলট প্রকল্পের ফলাফল উপস্থাপন করা হয়, যেখানে ৩১টি স্কুল ও ৫,৩৪২ জন শিক্ষার্থীর উপর পরীক্ষা চালানো হয়। ফলাফলে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের শেখার দক্ষতা নয় গুণ এবং অংশগ্রহণ ছয় গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। খান একাডেমি বাংলাদেশের সিইও আজওয়া নাঈম বলেন, “শিক্ষকরা এখন উপাত্ত ও ডিজিটাল সরঞ্জাম ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা প্রদান করছেন। শিক্ষকদের ক্ষমতায়ন এবং সঠিক উপকরণের সহায়তায় এই রূপান্তর সম্ভব হয়েছে।”
একবিংশ শতাব্দীর দক্ষতার প্রয়োজনীয়তা
অংশগ্রহণকারীরা শিক্ষাকে একবিংশ শতাব্দীর কর্মীদের জন্য প্রাসঙ্গিক করতে সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তারা গণিত, বিজ্ঞান ও ভাষায় শক্তিশালী বুনিয়াদি শিক্ষার পাশাপাশি ডিজিটাল প্রস্তুতি, সুক্ষ্মচিন্তন, সমস্যা সমাধান এবং যোগাযোগ দক্ষতার উপর জোর দেন। তারা মনে করেন, শিক্ষা ব্যবস্থার পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন যাতে প্রতিটি তরুণ কেবল জ্ঞান নয়, বরং ক্যারিয়ার গড়ে তোলার দক্ষতা, সৃজনশীলতা ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ত্যাগ করে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশন-এর নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর কে হুসেইন, গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা চৌধুরী, প্রাইম ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজিম চৌধুরী, আইডিএলসি ফাইন্যান্সের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ সাদ বিন শামস, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব
Comments