Image description

পলাতক আসামিদের জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পথ বন্ধ করে নতুন বিধান যুক্ত করে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) এর সংশোধনী। এছাড়াও, শ্রম আইন ও অ্যামেন্ডমেন্ট অর্ডার চূড়ান্তভাবে অনুমোদন পেয়েছে, যেখানে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় নেওয়া হয়েছে একাধিক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির মিলনায়তনে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে আসিফ নজরুল জানান, দুটি গুরুত্বপূর্ণ আইন চূড়ান্তভাবে অনুমোদন লাভ করেছে। এর মধ্যে আরপিওতে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন হলো পলাতক কোনো আসামি আর নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। পাশাপাশি, নির্বাচনে ভোট গণনার সময় গণমাধ্যমের উপস্থিতির বিধানও যুক্ত করা হয়েছে, যা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনবে বলে মনে করা হচ্ছে।

এছাড়া, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, জুলাই স্মৃতি জাদুঘর আইন এবং সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় আইনের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই আইনগুলো চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আরও আলোচনার পর উপদেষ্টা পরিষদে পুনরায় উপস্থাপন করা হবে বলে জানান আইন উপদেষ্টা।

আসিফ নজরুল বাংলাদেশ শ্রম আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশকে "খুবই যুগান্তকারী আইন" হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা ও কল্যাণের জন্য এই আইনে ৯০টি সেকশনে সংশোধনী আনা হয়েছে এবং তিনটি শিডিউলে পরিবর্তন আনা হয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনীগুলোর মধ্যে রয়েছে:

প্রযোজ্যতা বৃদ্ধি: এখন থেকে নন-প্রফিট অর্গানাইজেশনগুলোর ক্ষেত্রেও শ্রম আইন প্রযোজ্য হবে।

শ্রমিকের সংজ্ঞা বিস্তৃতকরণ: গৃহপরিচারক এবং নাবিকরাও এখন শ্রমিকের সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হবেন এবং শ্রম আইনের সুরক্ষা পাবেন।

ব্ল্যাকলিস্টিং অবৈধ ঘোষণা: মালিকদের দ্বারা শ্রমিকদের ব্ল্যাকলিস্টিং করার প্রথাকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে, যা শ্রমিকদের নতুন কর্মসংস্থান পাওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান বাধা দূর করবে।

যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে কঠোর বিধান: কর্মস্থলে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

প্রসূতি সুবিধা বৃদ্ধি: প্রসূতি শ্রমিকদের কল্যাণমূলক সুবিধা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো হয়েছে।

ট্রেড ইউনিয়ন গঠন সহজীকরণ: ট্রেড ইউনিয়ন গঠন ও রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করা হয়েছে।

বৈষম্য নিষিদ্ধ: কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য, বিশেষ করে একই কাজের জন্য নারী ও পুরুষ শ্রমিকের বেতনে পার্থক্যকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

দুর্ঘটনা ক্ষতিপূরণ তহবিল: কর্মস্থলে দুর্ঘটনার শিকার শ্রমিকদের পুনর্বাসন ও চিকিৎসার জন্য একটি দুর্ঘটনা ক্ষতিপূরণ তহবিল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন। এই নতুন আইনগুলো দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।