Image description

বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদা ও গুরুত্ব অনুসারে বিশিষ্ট নাগরিকদের ভিভিআইপি, ভিআইপি ও সিআইপি—এই তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়। প্রশাসনের ‘রেডবুক’ ও ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ অনুযায়ী এদের নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা নির্ধারিত থাকে।

কারা কোন ক্যাটাগরিতে?

ভিভিআইপি: রাষ্ট্রের ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’। প্রটোকল অনুযায়ী শুধু রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী (বা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা) এই মর্যাদার অধিকারী। এছাড়া বিদেশি রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানরা বাংলাদেশ সফরে এলে ভিভিআইপি মর্যাদা পান। তবে সরকার চাইলে প্রজ্ঞাপন জারি করে যেকোনো ব্যক্তিকে ভিভিআইপি ঘোষণা করতে পারে।

ভিআইপি: ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’। এর মধ্যে রয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, সংসদ সদস্য, সিনিয়র সচিব, সচিব, তিন বাহিনীর প্রধান এবং পুলিশ প্রধান। সরকার প্রয়োজন মনে করলে অন্যদেরও এই মর্যাদা দিতে পারে।

সিআইপি: ‘বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’। ব্যবসা-বাণিজ্যে বিশেষ অবদানের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এই তালিকা নির্ধারণ করে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার কেমন?

পদমর্যাদা অনুযায়ী নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে ভিন্ন ভিন্ন বাহিনী:

রাষ্ট্রপতি: তার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট (পিজিআর)।

প্রধানমন্ত্রী/প্রধান উপদেষ্টা ও ভিভিআইপি: এদের নিরাপত্তার মূল দায়িত্বে থাকে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)। এদের সহায়তায় থাকে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা।

ভিআইপি: ভিআইপিদের নিরাপত্তায় পুলিশের প্রোটেকশন টিম ও স্পেশাল ব্রাঞ্চ কাজ করে। এছাড়া ঝুঁকি বিবেচনায় (থ্রেট অ্যাসেসমেন্ট) তারা গানম্যান বা বডিগার্ড পেয়ে থাকেন। বিদেশি কূটনীতিকদের নিরাপত্তায় থাকে চ্যান্সারি পুলিশ।

সড়ক প্রটোকল ও চলাচলের নিয়ম:

ভিভিআইপি: রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বা ভিভিআইপিদের চলাচলের সময় সড়কের একপাশ ফাঁকা করে দেওয়া হয় এবং সাধারণ যানচলাচল বন্ধ রাখা হয়। তাদের যাত্রার ১৫ মিনিট আগে এসএসএফ ও ট্রাফিক বিভাগ সমন্বয় করে রুট ক্লিয়ার করে।

ভিআইপি: ভিআইপিদের জন্য সড়কে বিশেষ কোনো সুবিধা বা রাস্তা বন্ধ করার নিয়ম নেই। তারা নিরাপত্তা প্রটোকল পেলেও ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হয়। উল্টো পথে চলা বা অন্য গাড়ি সরিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ তাদের নেই।

‘বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (এসএসএফ) আইন-২০২১’ অনুযায়ী ভিভিআইপিদের সুরক্ষায় এই বাহিনীকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে:

১. বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার: ভিভিআইপি যেখানে অবস্থান করবেন বা যে পথ দিয়ে যাবেন, সেখানে কারও উপস্থিতি বা চলাচল ক্ষতিকর মনে হলে এসএসএফ কর্মকর্তা সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেফতার করতে পারবেন।

২. বলপ্রয়োগ ও গুলি বর্ষণ: গ্রেফতারের সময় কেউ বাধা দিলে বা পালানোর চেষ্টা করলে এসএসএফ প্রয়োজনীয় শক্তি প্রয়োগ করতে পারে। পরিস্থিতির প্রয়োজনে হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর গুলি বর্ষণ বা এমন বলপ্রয়োগ করা যাবে, যাতে ওই ব্যক্তির মৃত্যুও হতে পারে।

৩. গোয়েন্দা তথ্য: ভিভিআইপির নিরাপত্তার স্বার্থে যেকোনো গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও আদান-প্রদানের ক্ষমতা তাদের রয়েছে।