Image description

সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার, বীর উত্তমের জানাজা ও রাষ্ট্রীয় শেষ বিদায় সম্পন্ন হয়েছে। রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুর ২টার দিকে ঢাকা সেনানিবাসস্থ বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ঘাঁটি বাশার প্যারেড গ্রাউন্ডে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

জানাজা শেষে জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানকে যথাযথ সামরিক মর্যাদায় ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করা হয়। এসময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, তিন বাহিনীর প্রধানগণসহ সামরিক-বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী উপস্থিত থেকে তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এর আগে শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেন এই কিংবদন্তি সমরনায়ক। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। তিনি স্ত্রী, এক কন্যা, দুই পুত্রসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেছেন।

এ কে খন্দকার ১৯৩০ সালের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। বাবার কর্মস্থল রংপুরে জন্ম হলেও তাঁর পৈতৃক নিবাস পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার ভারেঙ্গা গ্রামে। ১৯৪৭ সালে মালদা জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাসের পর ১৯৫২ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে (পিএএফ) পাইলট অফিসার হিসেবে কমিশন লাভ করেন। বর্ণাঢ্য সামরিক জীবনে তিনি ফাইটার পাইলট, ফ্লাইং ইনস্ট্রাক্টর ও স্কোয়াড্রন কমান্ডার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি উইং কমান্ডার হিসেবে পাকিস্তান ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তিনি প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের অধীনে গঠিত মুক্তিবাহিনীর ‘ডেপুটি চিফ অব স্টাফ’ বা উপ-সর্বাধিনায়কের ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর তাঁকে গ্রুপ ক্যাপ্টেন পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়।

মুক্তযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানীর ব্যক্তিগত উপ-প্রধান সেনাপতি হিসেবে রণাঙ্গনের পরিকল্পনা ও স্বাধীন বাংলাদেশের বিমানবাহিনী গঠনে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়। বিশেষ করে ১৬ ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিনি প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুসংগঠিত করতে এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকারের অসামান্য দেশপ্রেম ও সাহসিকতা জাতি চিরকাল বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ রাখবে। জানাজা শেষে তাঁকে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় দাফন করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।