জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, রাজনৈতিক দলীয় প্রতীক হিসেবে এনসিপিকে শাপলা প্রতীক না দেয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের স্বেচ্ছাচারিতা। তিনি ধারণা করছেন, নির্বাচন কমিশন অন্য কোনো শক্তির দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে এবং গায়ের জোরে এমন আদেশ চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। তার মতে, এখানে কোনো আইনি বাধা নেই এবং নির্বাচন ও রাজনৈতিক কার্যক্রম ব্যাহত করতেই এনসিপিকে শাপলা প্রতীক দেয়া হচ্ছে না। এই প্রতীক না দেয়া হলে রাজপথে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারিও দেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুর দেড়টায় রাজশাহী পর্যটন মোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন নাহিদ ইসলাম। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন, দলটির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব নাহিদা সারওয়ার নিভা, সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান ইমনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেন, সাংগঠনিক কাজের অংশ হিসেবে নেতৃত্ব বাছাই ও সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে তারা রাজশাহীতে এসেছেন। ইতোমধ্যে দুটি জেলার নেতৃত্ব বাছাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। তিনি মনে করেন, আগামীর বাংলাদেশে এনসিপিকে শক্তভাবে রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ প্রশ্নে এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে আগামীতে জামায়াত কিংবা বিএনপি এককভাবে দাঁড়াতে পারবে না।
তিনি বলেন, সংসদে স্থিতিশীলতা এবং সকল ধরনের অপশক্তির সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য জনপ্রতিনিধিত্ব সংসদে করতে চায় এনসিপি। পুঙ্খানুপুঙ্খ বাছাইয়ের মাধ্যমে দ্রুতই তৃণমূলে সকল আহ্বায়ক কমিটিগুলো দেয়া হবে।
পরে এনসিপি প্রধান নাহিদ ইসলাম জুলাই সনদ ও সংস্কার বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া কিভাবে হবে সেটি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এটি কেবলই একটি আনুষ্ঠানিকতা, যার মূল্য কেবলই একটি কাগুজে মূল্য। এ জন্যই তারা স্বাক্ষর করেননি। তিনি ৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের পুনরাবৃত্তি বাংলাদেশে হতে দেবেন না বলেও জানান। আজকে ঐক্যমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে সুপারিশমালা প্রধান উপদেষ্টার কাছে যাবার কথা। জুলাই সনদে স্বাক্ষর করতে তারা অপেক্ষা করছেন।
তিনি বলেন, জুলাই সনদ আদেশ বাস্তবায়ন হবে গণভোটের মাধ্যমে। গণভোটের মাধ্যমে ড. ইউনূস এই আদেশে স্বাক্ষর করবেন। রাষ্ট্রপতি এই আদেশ স্বাক্ষর করতে পারবেন না, তাহলে বিদ্যমান সংবিধানের আলোকে আদেশ সাংঘর্ষিক হবে।
এদিকে ফেব্রুয়ারির মধ্যেই সামনের নির্বাচন চেয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, এনসিপি এখন পর্যন্ত কোনো জোটের সঙ্গে যুক্ত হবার সিদ্ধান্ত নেয়নি। তিনি মন্তব্য করেন, সংস্কারের বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়ায়, দেশের মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়ায়, ইতিহাসে যাদের অনেক দায়ভার রয়েছে এই ধরনের শক্তির সঙ্গে জোটে যাবার ক্ষেত্রে তাদের ভাবতে হবে। সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানান, গণহত্যা মামলা, বিচার প্রক্রিয়া, ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম যাতে পরবর্তী সরকারের সময়ে বহাল থাকে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে নাহিদ বলেন, নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ নতুন নয়, শুধু শাপলা প্রতীকের ইস্যুতে নয়। কমিশন গঠনের সময় থেকেই এনসিপি তাদের নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। কমিশনকে নিয়ে তাদের অভিযোগগুলো সামগ্রিক। কমিশন যদি মনে করে এনসিপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেবে না, তখন বিষয়গুলো রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করা হবে। তিনি বলেন, এনসিপি উচ্চ কক্ষে পিআর চায়।
নাহিদ বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো দিনই নির্বাচনে বিশ্বাস করেনি, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেনি। আওয়ামী লীগ, ফ্যাসিবাদ এখনও নানাভাবে বহাল রয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা হচ্ছে। জাতীয় পার্টি ও এই সকল দলগুলোর বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাদের বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যে আনা এই অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব বলেও মনে করেন তিনি।




Comments