Image description

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, গত ১৫ বছরে জ্বলে-পুড়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের খাঁটি সোনায় পরিণত হয়েছে ৷ এই খাঁটি সোনায় কোনো যাতে দাগ লাগতে না পারে, কেউ যাতে প্রশ্ন তুলতে না পারে। মনে রাখতে হবে, এই ঐক্যবদ্ধ বিএনপি শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়েছে। নির্বাচন আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন শেষ হবে না। যারা আগামী নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়, নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে চায়, তাদের সাতই নভেম্বরের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে পরাজিত করতে হবে।

শুক্রবার (৭ নভেম্বর) নগরীর ২ নম্বর গেইট বিপ্লব উদ্যানের পাশে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সাতই নভেম্বরের চেতনায় গণতন্ত্রের শত্রুদের মোকাবিলার আহ্বান জানিয়ে আমীর খসরু বলেন, আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে সমগ্র জাতি ঐক্যবদ্ধ থেকে বাংলাদেশের শত্রুদের মোকাবিলা করেছে, গণতন্ত্রের শত্রুদের মোকাবিলা করেছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্ব বিপন্নকারীদের মোকাবিলা করেছে। আজকে আবার সময় এসেছে ঐক্যবদ্ধভাবে, যারা নির্বাচন, গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়, যারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে, সবাইকে সাতই নভেম্বরের স্পিরিটে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে এদেশের মালিক এদেশের জনগণ। তাদের মালিকানা নিশ্চিত হবে একটি নির্বাচনের মাধ্যমে, একটি নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে, একটি নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে। সুতরাং যারা এই নির্বাচনের পথে বাধা সৃষ্টি করতে চায়, তাদের সাতই নভেম্বরের মতো পরাজিত করতে হবে।

জুলাই সনদ নিয়ে বিভক্তি তৈরি না করার আহ্বান জানিয়ে আমীর খসরু বলেন, আপনারা দেখেছেন একটা ঐকমত্য কমিশন হয়েছিল। অর্থাৎ ঐক্য করার জন্য একটা কমিটি হয়েছিল। আমরা বারবার বলেছি আপনাদের কাজ হচ্ছে সব দলের সঙ্গে বসে একটা ঐকমত্য সৃষ্টি করা। ঐকমত্য মানে এই নয় যে, সব দল সবকিছুতে একমত হবে। যেগুলোতে ঐকমত্য হবে, সেটা নিয়েই আমরা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাবো। আর যেগুলোতে ঐকমত্য হবে না, সেগুলো নিয়ে প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের সুযোগ আছে, আগামী নির্বাচনের আগে সেগুলো জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়া, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদে পাশ করা। এর বাইরে কিছু করার সুযোগ নেই। ঐকমত্যের বাইরে যাবার কোনো সুযোগ নেই।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে দীর্ঘ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ঐকমত্য হয়েছে, সেই ঐক্যমতের প্রেক্ষিতে জুলাই সনদ হয়েছে, চ্যাপ্টার ক্লোজ, চ্যাপ্টার ক্লোজ, এর বাইরে যাবার কোনো সুযোগ নেই। যারা এর বাইরে গিয়ে তাদের নিজস্ব দাবিদাওয়া অন্য দলের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, বাংলাদেশের মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, তাদের বলছি-গণতন্ত্রের পথে হাঁটতে হবে। শেখ হাসিনার পথে হাঁটলে চলবে না, স্বৈরাচারের পথে হাঁটলে চলবে না, গণতন্ত্রের পথে হাঁটতে হবে। গণতন্ত্রে যদি বিশ্বাস করেন, তাহলে জনগণের ম্যান্ডেটের জন্য জনগণের কাছে যান। ঢাকায় বসে আপনাদের নিজেদের দাবি আদায়ের জন্য বিএনপির ওপর চাপ সৃষ্টি করবেন না৷ প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের নিজস্ব ভাবনা, চিন্তা, দর্শন আছে। সুতরাং আমরা সম্মান করি, কিন্তু একদলের ইচ্ছা আরেক দলের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই৷

দলীয় প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আর কিছু কিছু ঘটনা ঘটছে। এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগে গুলি করা হয়েছে, একজন নিহত হয়েছেন, আমাদের নেতা এরশাদ উল্লাহ আহত হয়েছেন, আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন৷ বলা হচ্ছে, দুই দলের অন্তর্দ্বন্দ্বে এই ঘটনা ঘটেছে। ঠিক আছে দুই দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব, কিন্তু সেটা এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগে কেন হতে হবে? সেটা বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচিতে হবে কেন? তাহলে জনগণ প্রশ্ন তুলছে এই দুই দলের অন্তর্দ্বন্দ্বকে ব্যবহার করে কেউ আগামী নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চায় কী-না। সবাইকে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে, যারা আগামী নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়, বিলম্বিত করতে চায়, তারা গণতন্ত্রের শত্রু। তারা দেশের জনগণের অধিকারের বিরুদ্ধে কাজ করছে। তারা বাংলাদেশে নির্বাচন চায় না। নির্বাচন ছাড়াই যদি ভালো ভালো খাবার খাওয়া যায়, তাহলে নির্বাচন চাইবে কেন, এটা কি আমরা বুঝি না? আমরা সবাই বুঝি। ওই খাওয়া আর খাওয়ানো যাবে না। মজার মজার খাবার খাবে বাংলাদেশের মানুষ। সবাই সজাগ থাকবেন, চোখকান খোলা রাখবেন, এই শত্রুদের যেখানে দেখবেন, পুলিশের হাতে তুলে দেবেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেবেন। এরা আমাদের ভেতরে ঢুকে সমস্যা সৃষ্টি করছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারীর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে তারেক রহমান ও গণতন্ত্র নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। একটি মহল নির্বাচন বানচাল করার চক্রান্ত করছে।এসব ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে বাংলাদেশের মানুষ প্রস্তুত। আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন মানুষকে ভোট দিতে দেয়নি। জণগণ এখন ধানের শীষে ভোট দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। দেশে ধানের শীষের জোয়ার ওঠেছে। যারা নির্বাচনে পরাজিত হবে জানে তারাই নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু কোনো ষড়যন্ত্র সফল হবে না। ইনশাআল্লাহ, ধানের শীষ জয়ী হয়ে তারেক রহমান প্রধান মন্ত্রী হবেন।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহবায়ক আর ইউ চৌধুরী শাহিন এবং ইয়াছিন চৌধুরী লিটনের পরিচালনায় এতে বিশেষ অতিথির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, নির্বাহী কমিটির সদস্য শামসুল আলম ও বিএনপির আর্ন্তজাতিক বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।