পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য থাকা সত্ত্বেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন
গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে দেশের শীর্ষ দুই জাতীয় দৈনিক ‘প্রথম আলো’ ও ‘ডেইলি স্টার’ কার্যালয়ে হামলার ঘটনাকে জাতীয় লজ্জা হিসেবে অভিহিত করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেছেন, "গণমাধ্যম পুড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য সারা বিশ্ব দেখেছে। এটি এমন এক লজ্জা যা শুধু ক্ষমা প্রার্থনা করে মুছে ফেলা সম্ভব নয়।"
রোববার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর হোটেল র্যাডিসন ব্লুতে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে বিভিন্ন সংবাদপত্রের সম্পাদক, টেলিভিশন ও রেডিওর বার্তাপ্রধান এবং বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে এই সভার আয়োজন করে বিএনপি।
হামলা প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতার তীব্র সমালোচনা করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, "হামলার বিষয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদন থাকা সত্ত্বেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হলো না? শোনা যাচ্ছে, পুলিশকে জানানোর এক-দুই ঘণ্টা পর তারা ঘটনাস্থলে এসেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা কাদের হাতে রাষ্ট্রব্যবস্থা দেব? যারা নিরপেক্ষ নির্বাচনের দায়িত্ব নিয়েছেন, তাঁদের ভূমিকা আরও কঠোর হওয়া উচিত।"
দেশে বর্তমানে ‘মবোক্রেসি’ (উচ্ছৃঙ্খল জনতা বা মবের শাসন) মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে উল্লেখ করে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, "আমরা চেয়েছিলাম গণতন্ত্র (ডেমোক্রেসি), কিন্তু কেন মবোক্রেসিকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে? নির্দিষ্ট কিছু স্থাপনা বা গণমাধ্যমকে টার্গেট করা হচ্ছে। সরকারের এই দুর্বলতা দূর করে কঠোর হস্তে বিশৃঙ্খলা দমন করতে হবে।"
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, "জনগণ চায় গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমনভাবে গড়তে হবে যাতে সেগুলো গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ হয়। ১৮ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের খুঁটিকে আরও শক্তিশালী করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।"
অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বিগত ফ্যাসিবাদী আমলের নির্যাতনের কথা স্মরণ করে বলেন, "সাংবাদিক শফিক রেহমানের মতো প্রবীণ ব্যক্তিদের ওপর যে জুলুম হয়েছে, তা আমরা ভুলে যাইনি। এখনো নানা ঘটনা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে।" ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যার ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, "কারও মতামতের জন্য তাঁকে জীবন দিতে হবে, এটা কাম্য নয়। ফ্যাসিবাদ-উত্তর সময়ে এমন আক্রমণ গ্রহণযোগ্য নয়।"
মতবিনিময় সভায় গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ‘আজকের পত্রিকা’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কামরুল হাসান, ‘নয়া দিগন্ত’র সম্পাদক সালাহউদ্দিন মুহাম্মদ বাবর, ‘মানবজমিন’-এর প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান, ‘দৈনিক খবরের কাগজ’-এর সম্পাদক মোস্তফা কামাল, ‘কালের কণ্ঠ’-এর সম্পাদক হাসান হাফিজ, ‘যুগান্তর’-এর সম্পাদক আব্দুল হাই শিকদার ও নির্বাহী সম্পাদক এনাম আবেদীন, এবং ‘আমার দেশ’-এর নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদসহ আরও অনেকে।
সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ এবং মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ আহমেদ পাভেলসহ দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে সাংবাদিকদের সক্রিয় সহযোগিতা কামনা করা হয়।




Comments