Image description

রাজধানীর ব্যস্ত গুলশান অ্যাভিনিউয়ের কোলাহলের মধ্যেও আলাদা করে নজর কাড়ছে গুলশান-২-এর ১৯৬ নম্বর বাড়ি। বাহ্যিকভাবে সাধারণ হলেও বাড়িটির চারপাশে বাড়তি নিরাপত্তা, সিসিটিভি ক্যামেরা ও অস্থায়ী ছাউনি জানিয়ে দিচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনার প্রস্তুতি চলছে। দীর্ঘ ১৭ বছরের প্রবাস জীবন শেষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই ঠিকানায় ফিরছেন।

ঢাকায় পৌঁছেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাকে বহনকারী উড়োজাহাজটি বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৩৯ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। তার সঙ্গে দেশে ফিরছেন স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ও মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমান। এর আগে ফ্লাইটটি বাংলাদেশ সময় বুধবার রাত সোয়া ১২টায় লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর ত্যাগ করে।

তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন ঘিরে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে। দলীয় নেতাদের মতে, এটি শুধু একজন রাজনৈতিক নেতার দেশে ফেরা নয়, বরং একটি দীর্ঘ সময়ের রাজনৈতিক অধ্যায়ের সমাপ্তি।

দলীয় কর্মসূচি অনুযায়ী, বিমানবন্দর থেকে ৩০০ ফিট এলাকায় স্থাপিত সংবর্ধনা মঞ্চে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেবেন তারেক রহমান। এরপর তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে তার মা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখবেন। সেখান থেকে গুলশানের ১৯৬ নম্বর বাড়িতে যাওয়ার কথা রয়েছে।

গুলশানের এই বাড়িটি জিয়া পরিবারের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শহীদ হওয়ার পর তৎকালীন সরকার বাড়িটি খালেদা জিয়াকে বরাদ্দ দেয়। বছরের পর বছর ধরে এখানে অনুষ্ঠিত হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বৈঠক ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ।

কয়েক মাস আগে আনুষ্ঠানিকভাবে বাড়িটির মালিকানা দলিল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নামে হস্তান্তর করা হয়। পাশেই রয়েছে ‘ফিরোজা’, খালেদা জিয়ার দীর্ঘদিনের বাসভবন। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও পাশের বাড়িটি প্রস্তুত হচ্ছে আরেক ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনের জন্য।

বুধবার রাতে সরেজমিনে দেখা যায়, ১৯৬ নম্বর বাড়িটির সংস্কার কাজ শেষ পর্যায়ে। দেওয়ালে নতুন রং, নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে এবং একাধিক চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।

রাত থেকেই বাড়িটির সামনের সড়কে সাধারণ মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। আশপাশের গলিতে টাঙানো হয়েছে তারেক রহমানের ছবি সংবলিত ব্যানার ও ফেস্টুন। দলীয় সূত্র জানায়, সরকারি নিরাপত্তার পাশাপাশি বিএনপির নিজস্ব ব্যবস্থাপনাতেও আলাদা নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে।

শুধু বাসভবন নয়, গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়েও তারেক রহমানের জন্য আলাদা কক্ষ প্রস্তুত করা হয়েছে। নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও একই ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

এছাড়া গুলশানের ৯০ নম্বর সড়কের ১০/সি নম্বর বাড়িতে নতুন চারতলা রাজনৈতিক কার্যালয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে বিএনপি। দলীয় সূত্র জানায়, এখান থেকেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

নতুন কার্যালয়ের দোতলায় রয়েছে আধুনিক ব্রিফিং কক্ষ। অন্যান্য তলায় গড়ে তোলা হয়েছে গবেষণা সেল ও বিভাগভিত্তিক দপ্তর, যেখানে নির্বাচন, নীতি ও রাষ্ট্রীয় সংস্কার বিষয়ে প্রস্তুতি চলছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে বিএনপির রাজনীতিতে নতুন অধ্যায় শুরু হচ্ছে। সেই লক্ষ্য সামনে রেখেই সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।