Image description

২৭০০ বছর আগে, প্রাচীন ভারতে চীন থেকে ছাত্ররা উচ্চ শিক্ষার জন্য আসত। চীনের পরিব্রাজক ইটসিং তার ভ্রমণবৃত্তান্তে লিখেছেন, ৫৬ জন বৌদ্ধ পর্যটক চীন থেকে ভারত এসেছেন। ইটসিং ভারত থেকে চীনে বৌদ্ধ গ্রন্থের প্রায় ৪০০টি এবং হিউয়েন সাং ৬৫৭টি পাণ্ডুলিপি নিয়ে গিয়েছিলেন। তখন ভারতের তক্ষশিলা, বিক্রমশিলা, উদ্দন্দপুর, তেলহাদা নালন্দা বৌদ্ধ মহাবিশ্ববিদ্যালয়ে বড় বড় লাইব্রেরি ছিল। নালন্দার বৃহত্তম লাইব্রেরিটি ছিল ৯ তলা বিশিষ্ট। তখন গুণভদ্র, ধর্মরুচি, রত্নমতি, বোধিরুচির মতো অনেক বৌদ্ধ পণ্ডিত চীনে গিয়ে বৌদ্ধ গ্রন্থগুলো চীনা ভাষায় অনুবাদ করেন।

১১ শতক পর্যন্ত, তিব্বতে বৌদ্ধ পণ্ডিতদের অবিরাম ভারতে প্রবাহ ছিল। শান্তিরক্ষিত, আর্যদেব, কমলশীল, অতীষার মতো কয়েক ডজন বৌদ্ধ পণ্ডিত তিব্বতে গিয়েছিলেন, বৌদ্ধ গ্রন্থ অনুবাদ ও লিখেছেন। আতিশা একাই ২০০টি বৌদ্ধ গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। চীনের পণ্ডিত ফা-হিয়েন ভারত থেকে জাহাজে কী বহু বৌদ্ধ গ্রন্থ নিয়ে গেছেন? বর্তমান ২৩ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখে, রাশিয়ার কাজানে অনুষ্ঠিত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের মাঝে পাঁচ বছর পরে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে মিলিত হলেন এশিয়ার পরাশক্তি প্রধান চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তারা নিশ্চিত করেছেন যে ‘স্থিতিশীল’ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক একটি বহু-মেরুর বিশ্বে ‘অবদান’ রাখবে এবং এটি ‘আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি ও সমৃদ্ধির উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’ বেইজিং এবং নয়াদিল্লি পূর্ব লাদাখে দুই সেনাবাহিনীর মধ্যে সীমান্ত অচলাবস্থার অবসানের জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর দুদিন পরে এই বৈঠকটি হলো। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুই হিমালয়ের প্রতিবেশী দেশের নেতারা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নতা এবং সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। মোদি ‘পার্থক্য এবং বিরোধগুলোকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার গুরুত্ব এবং তাদের শান্তি ও প্রশান্তিকে বিঘ্নিত করার অনুমতি না দেয়ার গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন।’ ভারত-চীন সীমানা প্রশ্নে সীমান্ত এলাকায় শান্তি পরিচালনার তদারকি করতে এবং ‘সীমানা প্রশ্নের একটি ন্যায্য, যুক্তিসঙ্গত এবং পারস্পরিকভাবে গ্রহণযোগ্য সমাধান অন্বেষণ করার জন্য কাজ করবেন। বলেছেন মোদি। ওই বৈঠকে প্রেসিডেন্ট শি উল্লেখ করেছেন, “একটি সমৃদ্ধ সভ্যতা হিসাবে, বৃহৎ উন্নয়নশীল দেশ এবং গ্লোবাল সাউথের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, চীন এবং ভারত উভয়ই তাদের নিজ নিজ আধুনিকীকরণ প্রচেষ্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইতিহাসের ধারা এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সঠিক দিকনির্দেশনা বজায় রাখা প্রয়োজন দুই দেশ এবং দুই জনগণের মৌলিক স্বার্থেই। দুই পক্ষের উচিত যোগাযোগ ও সহযোগিতা জোরদার করা, কৌশলগত পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধি করা এবং একে অপরের উন্নয়নে সহায়তা করা। দুই দেশকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক দায়িত্ব নিতে হবে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর শক্তি ও ঐক্য বৃদ্ধিতে একটি উদাহরণ স্থাপন করতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি বহুমুখী বিশ্ব এবং বৃহত্তর গণতন্ত্রের উন্নয়নে অবদান রাখতে হবে।’’ আরো বলেন, “চীন-ভারত সম্পর্ক মূলত দুটি বৃহৎ উন্নয়নশীল দেশ এবং প্রতিবেশী, রয়েছে ১.৪ বিলিয়ন জনসংখ্যা। উন্নয়ন এখন চীন ও ভারতের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য। দুই পক্ষের উচিত তাদের গুরুত্বপূর্ণ বোঝাপড়া বজায় রাখা। যার মধ্যে রয়েছে চীন ও ভারত হুমকির পরিবর্তে একে অপরের উন্নয়নের সুযোগ এবং প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়ে সহযোগিতার অংশীদার হওয়া। উচিত একে অপরের প্রতি একটি সঠিক কৌশলগত ধারণা বজায় রাখা। বড় প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য সম্প্রীতিতে বসবাস এবং পাশাপাশি উন্নয়নের জন্য সঠিক এবং উজ্জ্বল পথ খুঁজে পেতে একসঙ্গে কাজ করা উচিত।”

প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, “ভারত-চীন সম্পর্কের স্থিতিশীল বৃদ্ধি বজায় রাখা দুই দেশ এবং জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধুমাত্র ২.৮ বিলিয়ন মানুষের মঙ্গল ও ভবিষ্যৎ নিয়েই উদ্বেগ প্রকাশ করে না, বরং এই অঞ্চল এবং এমনকি বৃহত্তর বিশ্বের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্যও এটি অত্যন্ত তাৎপর্য বহন করে। একটি জটিল আন্তর্জাতিক ল্যান্ডস্কেপের বিপরীতে, ভারত ও চীনের মধ্যে সহযোগিতা, দুটি প্রাচীন সভ্যতা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে চালিত করতে এবং বিশ্বে বহুমুখিতাকে উন্নীত করতে সাহায্য করতে পারে। ভারত কৌশলগত যোগাযোগ জোরদার করতে, কৌশলগত পারস্পরিক বিশ্বাস বাড়াতে এবং চীনের সাথে পারস্পরিক সহযোগিতা প্রসারিত করতে ইচ্ছুক। এটি চীনের সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সভাপতিত্বের জন্য সর্বাত্মক সমর্থন দেবে। ব্রিকস এবং অন্যান্য বহুপাক্ষিক কাঠামোতে চীনের সাথে যোগাযোগ ও সহযোগিতা জোরদার করবে।”

ভারত মনে করে তার বার্ষিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে, বিশ্বব্যাপী রপ্তানি বাড়ানোর জন্য চীন থেকে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এফডিআই প্রবাহ বৃদ্ধি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ২০২০ সালে, পূর্ব লাদাখ উত্তেজনার ফলস্বরূপ, ভারত চীন থেকে এফডিআই-এর উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। তাই ভারত যদি ‘চায়না প্লাস ওয়ান’ কৌশলের সুবিধা নিতে চায়, তাহলে তাকে হয় চীনা সরবরাহ চেইনে একীভূত করতে হবে বা ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি বাড়াতে’ চীন থেকে এফডিআই ব্যবহার করতে হবে। গত জুলাইয়ের শুরুতে, এস জয়শঙ্কর সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও) এর সাইডলাইনে, চীনের ওয়াং ইয়ের সাথে দেখা করেছিলেন। জয়শঙ্কর তার এক্স-এ উল্লেখ করেছেন যে তিনি এবং তার প্রতিপক্ষ ‘সীমান্ত অঞ্চলে অবশিষ্ট সমস্যাগুলোর প্রাথমিক সমাধান নিয়ে আলোচনা করেছেন।’ ‘কূটনৈতিক এবং সামরিক চ্যানেলের মাধ্যমে প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করতে’ সম্মত হয়েছে, ‘এলএসিকে সম্মান করা এবং সীমান্ত এলাকায় শান্তি ও প্রশান্তি নিশ্চিত করা অপরিহার্য।’ ‘তিনটি পারস্পরিক শ্রদ্ধা, পারস্পরিক সংবেদনশীলতা এবং পারস্পরিক স্বার্থ’ দেখা দরকার।

প্রধানমন্ত্রী মোদি ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে নিউজউইক ম্যাগাজিনকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। যেখানে তিনি উল্লেখ করেছিলেন, “তার দৃষ্টিতে চীনের সাথে সম্পর্ক ‘গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ’। তার ‘বিশ্বাস যে সীমান্তে দীর্ঘস্থায়ী পরিস্থিতির সমাধান করা দরকার যাতে দ্বিপাক্ষিক মিথস্ক্রিয়ায় অস্বাভাবিকতা পিছনে ফেলে দেওয়া যায়।’’ ‘কূটনৈতিক এবং সামরিক স্তরে ইতিবাচক এবং গঠনমূলক দ্বিপাক্ষিক ব্যস্ততার মাধ্যমে, আমরা আমাদের সীমান্তে শান্তি ও প্রশান্তি পুনরুদ্ধার করতে এবং বজায় রাখতে সক্ষম হব।’ বর্তমানে  ভারত-চীন বাণিজ্য ২০২৩-২৪ সালে, ১১৮.৪ বিলিয়ন ডলারে  পৌঁছেছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে চীন ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার করে তুলেছে। ভারত চীনে মাত্র ১৬.৬৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করে এবং ১০১.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আমদানি করে। টেলিকম যন্ত্রাংশ, ফার্মাসিউটিক্যাল উপাদান এবং উন্নত প্রযুক্তি উপাদানগুলোর মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্যগুলোর জন্য ভারত চীনের উপর নির্ভরশীল। তবে ভারত ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি অদূর ভবিষ্যতে দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ককে নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন করার সম্ভাবনা নেই। কারণ ভারতের কম রপ্তানি এবং চীনা আমদানির উপর উচ্চ নির্ভরতা, বিশেষ করে শিল্প খাতে, কাঠামোগত সমস্যার কারণে। তাই বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা মোকাবিলার জন্য দীর্ঘমেয়াদি নীতি ও কার্যকর প্রচেষ্টার প্রয়োজন হবে। তবে ফুদান ইউনিভার্সিটির ঝাং জিয়াডং-এর মতে, “দীর্ঘদিন ধরে অচল চীন-ভারত সম্পর্কের অবনতি সংঘাতে রূপ নেয়নি বরং আগের বাধাগুলো অতিক্রম করার চেষ্টা করেছে। উন্নতির গতি দুটি প্রধান কারণের উপর নির্ভর করবে: কার্যকরভাবে সীমান্ত বিরোধের সমাধান করা এবং ভারত চীনা বিনিয়োগ এবং জনগণের মধ্যে আদান-প্রদানের উপর বিধিনিষেধ শিথিল করা।”

বর্তমান ভারত ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ফলে রাশিয়া, ভারত এবং চীন এর মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতাকে সহজতর করবে। রাশিয়া, ভারত এবং চীন বা সংক্ষেপে আরআইসি পুনরুজ্জীবিত করার ধারণাটি চীনা কৌশলগত আলোচনায় আকর্ষণ লাভ করেছে, বিশেষ করে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক আহ্বানের বিষয়ে মন্তব্যের পর। তাছাড়া ভারতের উপর কানাডার ক্রমাগত হুমকি ও চাপ এবং বর্তমান আমেরিকা ও তার মিত্রদের বিভিন্ন ভারত বিরোধী প্রদক্ষেপ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য এই আরআইসি পুনরুজ্জীবিত করা ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। আর রাশিয়া, ভারত এবং চীন এখন সমভাবেই আমেরিকা ও তার মিত্রদের দ্বারা বিভিন্ন চাপে রয়েছে। তাই চীন-ভারত সম্পর্কের মধ্যস্থতায় রাশিয়ার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আর চীন এখন এই ধারণার প্রতি আরও বেশি গ্রহণযোগ্য বলে মনে হচ্ছে। কারণ রাশিয়া, ভারত এবং চীন এর প্রতি পশ্চিমা অর্থনৈতিক চাপ মোকাবিলা করার আকাক্সক্ষা থেকে আরআইসি পুনরুজ্জীবিত বা পুনর্মিলন ঘটেছে। উপরন্তু, ভারতে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের জন্য বিদেশি সমর্থন সম্পর্কে উদ্বেগ ত্রিপক্ষীয় কাঠামোকে শক্তিশালী করার জন্য একটি প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে। আরআইসি পুনরুজ্জীবিত হওয়ার ফলে ব্রিকসের ঐক্য বজায় রাখা, চীন-ভারত উত্তেজনা নিরসনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। কারণ ব্রিকসের কার্যকারিতা রক্ষার জন্য চীনের সাথে ভারতের সম্পৃক্ততা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চীনের সাথে ভারতের সাম্প্রতিক উত্তেজনা ব্রিকসের কার্যকারিতাকে বাধাগ্রস্ত করছিল। কিন্তু পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থায় এবং পশ্চিমা অর্থনৈতিক চাপের অর্থনৈতিক ল্যান্ডস্কেপ গঠনে ব্রিকস প্রাধান্য লাভ করায় ভারত তার গুরুত্ব বোধ করছিল।

তবে এই ইতিবাচক পরিবর্তন সত্ত্বেও, আমি চীন-ভারত সম্পর্কের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সতর্কভাবে আশাবাদী, কারণ অনেক জটিল চ্যালেঞ্জ অব্যাহত রয়েছে। আঞ্চলিক বিরোধ, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, আঞ্চলিক প্রভাব প্রতিযোগিতা এবং পাকিস্তান, তিব্বত এবং তাইওয়ানের সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলোর প্রতিবন্ধকতা। এমনকি ব্রিকসের মধ্যেও, চীন ও ভারতের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে মুদ্রার প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে। পরিশেষে বলা যায়, যেহেতু উভয় দেশ আগামী বছর কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫ বছর উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তবুও চীন-ভারত সম্পর্কের ভবিষ্যৎ গতিপথ অনিশ্চিত। তাই তারা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং কৌশলগত প্রতিযোগিতাকে আরও সহযোগিতামূলক সম্পর্কের দিকে নেভিগেট করতে পারে কিনা তা এই এশিয়ার আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য এবং বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ।

লেখক: গবেষক ও প্রাবন্ধিক

মানবকণ্ঠ/এসআরএস