Image description

দেশের সংকট-অনিশ্চয়তা কাটছে না- প্রতিদিন সংকট যুক্ত হচ্ছে- প্রশ্ন উঠছে নির্বাচন ব্যতিত সমাধান সম্ভব কি? প্রশ্ন উঠবে, আলোচনা-সমালোচনা হবে। কিন্তু সমাধান কীসে- এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে সমাধান বের করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার যখন রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কার করার প্রত্যয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, তখনই প্রশ্ন উঠেছে- নির্বাচন আগে নাকি সংস্কার? দেশের মানুষ সবকিছুর স্থিরতা চাচ্ছেন, তাই এমন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। 

এদিকে সরকার গঠনের পর বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে সময় পার করছে। এরমধ্যে কোনোটি দৃশ্যমান আবার কোনোটি অদৃশ্য চ্যালেঞ্জ। তবে কঠিন সংকটে পড়েছেন নির্বাচন নিয়ে। উভয় সংকটে পড়লেও সরকারের মতো করে হাঁটছে সরকার। এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কার বা নির্বাচনের কোনো রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়নি। সংস্কার আগে নাকি নির্বাচন- এ নিয়ে রাজনৈতিক দল ও দেশবাসী এখন ধোঁয়াশার মধ্যে আছে। 

এদিকে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রূপরেখা চেয়েছে এবং দ্রুত নির্বাচন চাচ্ছে। তারা মনে করছেন- একমাত্র রাজনৈতিক সরকারের পক্ষেই দেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। নির্বাচন না হলে দেশের সংকট-অনিশ্চয়তা কাটবে না। 

সংস্কারের ব্যাপারে কারও কোনো আপত্তি নেই। তবে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে সরকারের উচিত দ্রুত নির্বাচনের দিকে যাওয়া। সরকারও চলতি বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন। অনেকে বলছেন- সংস্কার শেষে নির্বাচন। এ অবস্থায় জনমনে প্রশ্ন উঠছে আগে সংস্কার নাকি নির্বাচন। এরমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ পাঁচ মাস পেরিয়ে গেছে। সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের ওপর জোর দিচ্ছে। নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান, দুর্নীতি দমনসহ ১০টি বিষয়ে সংস্কারের জন্য সরকার কমিশন গঠন করেছে। 

সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পেয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনাও করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে বলা হচ্ছে, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, নির্বাচিত সরকার ছাড়া জনগণের প্রত্যাশা আর কেউ পূরণ করতে পারবে না। সেজন্য প্রথমত, প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। পরে সেই সংস্কার অনুমোদন করা হবে। তাই নির্বাচন যত তাড়াতাড়ি হবে, ততই দেশের জন্য মঙ্গল। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার কোন পথে যাচ্ছে, তা স্পষ্ট নয়- দেশের জনগণ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর ভাষ্য অনুযায়ী আগে নির্বাচন পরে সংস্কার করা উচিত। 

প্রশ্ন হচ্ছে- বর্তমান সরকার কি সহসায় নির্বাচনের পথে হাঁটবেন? দুঃখজনক হলেও সত্য সংস্কার বা নির্বাচন কোনো কিছুরই দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। ইতোমধ্যে নানা বিষয়ে রাজনৈতিক দল এবং আদর্শের বিরোধ গণমাধ্যমে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। প্রত্যাশার তালিকায় যে প্রসঙ্গগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ তার মধ্যে প্রথমেই আসবে নির্বাচন। নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার করে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা জনগণের প্রধান প্রত্যাশা, যা তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। 

গত দেড় দশকে যা পায়নি নাগরিকরা। যা পায়নি, অথচ পেতে চেয়েছে, প্রত্যাশার তালিকায় সেসব থাকবে- এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন সময়ের দাবি। রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা এবং জনগণের আস্থা অর্জনে সময়োপযোগী উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ফেরাতে প্রথমেই প্রয়োজন হবে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন। 

নির্বাচন কমিশনের সফলতা নির্ভর করবে তাদের প্রজ্ঞা, দক্ষতা এবং নিরপেক্ষতার ওপর। কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে দৃঢ়তা ও সাহসিকতা থাকতে হবে। অতীতের ব্যর্থতাগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে সেগুলো অতিক্রম করার উদ্যোগ নিতে হবে। নতুন সরকারের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা- তারা অতীতের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দেবে। 

জনগণের কথা ভেবে নিকট অতীতের ভোটাধিকার প্রয়োগে বঞ্চিত বহু প্রতীক্ষিত নির্বাচনে অবাধে ভোট দেয়ার পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলেই- সুস্থ, সুন্দর একটি বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। দেশের জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর চাওয়াকে গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচন নাকি সংস্কার আগে করা উচিত সেই সিদ্ধান্ত নীতি কাঠামোর মধ্যেই নেয়া জরুরি। সরকার সময়ক্ষেপণ না করে নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন।