
মহালয়ার পুণ্য লগ্নে ঢাক-কাঁসা, শঙ্খধ্বনি আর চণ্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। রোববার ভোর ৬টা থেকে মণ্ডপে-মণ্ডপে মঙ্গলঘট স্থাপন, তর্পণ শ্রাদ্ধ ও দেবী দুর্গার আহ্বানের মাধ্যমে উৎসবের সূচনা হয়।
হিন্দু ধর্মীয় আচার অনুযায়ী, মহালয়া, বোধন ও সন্ধিপূজা মিলে গঠিত হয় দুর্গোৎসবের তিনটি প্রধান পর্ব। আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত চলে পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা, যা দেবীপক্ষ নামে পরিচিত। এ সময় চণ্ডীপাঠ, মঙ্গলঘট স্থাপন ও ফুল-তুলসী-বেলপাতা দিয়ে দেবীকে আহ্বান করা হয়।
মহালয়ার অন্যতম আচার তর্পণ শ্রাদ্ধ। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, পূর্বের তিন প্রজন্মের আত্মা পিতৃলোকে থাকেন, যা স্বর্গ ও মর্ত্যের মধ্যবর্তী স্থান। মৃত্যু দেবতা যম এই আত্মাদের পিতৃলোকে নিয়ে যান। মহালয়ায় তর্পণের মাধ্যমে পূর্বপুরুষদের স্মরণ করে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করা হয়। এর মাধ্যমে পিতৃপক্ষের অবসান ঘটে এবং দেবীপক্ষের শুরু হয়।
পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজারের বাসিন্দা হৃদয় সরকার বলেন, “সরকারি ছুটি না থাকায় মহালয়ায় অংশ নেওয়া সবসময় সম্ভব হয় না। তবে এবার পরিবার নিয়ে ঢাকেশ্বরী মন্দিরসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন মন্দির পরিদর্শন করবো।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সনাতনী শিক্ষার্থীরা মহালয়ার আয়োজন করেছে। আয়োজক কমিটির সদস্য রুপ কুমার সরকার বলেন, “দেবী দুর্গার আগমনী উপলক্ষে আমরা উৎসবমুখর। গত সপ্তাহ থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছি। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের অংশগ্রহণে এ আয়োজন সফল হবে বলে আশাবাদী।”
পঞ্জিকা অনুযায়ী, আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ষষ্ঠীপূজার মাধ্যমে পাঁচদিনের দুর্গোৎসব শুরু হবে। ২৯ সেপ্টেম্বর সপ্তমী, ৩০ সেপ্টেম্বর অষ্টমী, ১ অক্টোবর নবমী এবং ২ অক্টোবর দশমীতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পূজার সমাপ্তি হবে। এবার দেবী দুর্গা গজে (হাতির পিঠে) আগমন করবেন, যা শস্য শ্যামলা বসুন্ধরার প্রতীক। তবে দোলায় বিদায় নেওয়ার ইঙ্গিত মহামারীর।
পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, এবার ৩৩,৫৭৬টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হবে, যার মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে রয়েছে ২৫৫টি মণ্ডপ। প্রতিমা শিল্পীরা রং-তুলির আঁচড়ে দেবী দুর্গাকে সাজিয়ে তুলছেন, চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
Comments