
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কোনো সমন্বিত জাতীয় পরিবহন মাস্টার প্ল্যান নেই। এই দীর্ঘদিনের ঘাটতি দূর করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখন একটি পূর্ণাঙ্গ জাতীয় পরিবহন মাস্টার প্ল্যান তৈরি করছে। সড়ক বিভাগ এরইমধ্যে এর খসড়া প্রণয়ন শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন পরিবহন সেক্টরে নিয়োজিত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিন।
রোববার (১২ অক্টোবর) রাজধানীর রেল ভবনে সড়ক, রেলপথ, যোগাযোগ অবকাঠামো ও পরিবহন সম্পর্কিত খাত নিয়ে কাজ করা পেশাদার সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স ফর রেল অ্যান্ড রোড (আরআরআর) আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এই তথ্য জানান।
শেখ মইনউদ্দিন বলেন, দেশের পরিবহন খাতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সমন্বয়ের অভাব। বর্তমানে সড়ক, রেল, সেতু, নৌ ও বিমান প্রত্যেকটি খাত নিজস্ব পরিকল্পনা নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করছে। এর ফলে এক খাতের কাজ অন্য খাতের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে না। ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও আমাদের এখনও একটি জাতীয় পরিবহন মাস্টার প্ল্যান নেই। এখন আমরা সেই পরিকল্পনা তৈরির কাজ শুরু করেছি। এরইমধ্যে খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে এবং এতে সড়ক বিভাগ নেতৃত্ব দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, একজন অধ্যাপক এই প্রকল্পে পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন। পাশাপাশি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বিশ্বব্যাংক থেকেও আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা নেওয়া হচ্ছে। পরিকল্পনাটি চূড়ান্ত হলে পরবর্তী সরকার এটিকে বাস্তবায়নে এগিয়ে নিতে পারবে। দেশের যেকোনো সড়ক, রেল বা অবকাঠামো প্রকল্প ভবিষ্যতে যেন এই মাস্টার প্ল্যানের আওতায় হয়, সেটিই মূল লক্ষ্য। বর্তমানে এসব প্রকল্প খণ্ড খণ্ডভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে যা উন্নয়নের পথে বড় বাধা।
শেখ মইনউদ্দিন পরিবহন ব্যবস্থায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে আরএফআইডি (রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন) ভিত্তিক ই-টোলিং ব্যবস্থা। এতে টোল প্লাজায় যানবাহনের দীর্ঘ অপেক্ষা অনেকটাই কমে যাবে। তিনি বলেন, "আমরা চাই টোল গেটে ৪৫ মিনিট অপেক্ষা নয়, বরং কয়েক সেকেন্ডেই গাড়ি পার হতে পারবে।"
বিশেষ সহকারী আরও বলেন, 'ওয়ান পাস ফর এভরিথিং' প্রকল্পও পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে, যাতে একই স্মার্ট কার্ড ব্যবহার করে মেট্রোরেল, বাসসহ সব ধরনের গণপরিবহন সেবা নেওয়া যায়। মেট্রোরেলে ডিজিটাল টপ-আপ সুবিধা চালুর কাজও চলছে, যাতে যাত্রীরা স্টেশনে লাইনে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট না করে সহজেই কার্ডে রিচার্জ করতে পারেন।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, "আমাদের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন এখন একটি সমন্বিত পরিবহন পরিকল্পনা। যেখানে সড়ক, রেল, সেতু ও বন্দর সবই এক ছাতার নিচে আসবে।"
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার, রিপোর্টার্স ফর রেল অ্যান্ড রোডের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক তাওহীদুল ইসলামসহ সংগঠনের অন্যান্য সদস্যরা।
এখানে একটি আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থার চিত্র দেওয়া হলো, যেখানে ট্রেন, বাস, এবং অন্যান্য যান একই শহরের অবকাঠামোতে সমন্বিতভাবে চলাচল করছে, যা একটি 'জাতীয় পরিবহন মাস্টার প্ল্যান'-এর ধারণাকে প্রকাশ করে।
Comments