Image description

দক্ষিণ এশিয়ার আকাশে ফের যুদ্ধের আশঙ্কা ঘনিয়ে এসেছে। শনিবার (১১ অক্টোবর) রাতে আফগান বাহিনীর হামলায় অন্তত ৫৮ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে তালেবান সরকার। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষের পুনরাবৃত্তি এই অঞ্চলে আরও বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি করছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা।

বৃহস্পতিবার ও শনিবারের ধারাবাহিক সংঘর্ষের পর থেকে উভয় পক্ষই একে অপরের সীমান্তচৌকি দখল ও ধ্বংসের দাবি করেছে। পাকিস্তান বিমান বাহিনী কাবুলসহ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পাকটিকা প্রদেশে বিমান হামলা চালায়। এর জবাবে আফগান বাহিনী শনিবার রাতে পাল্টা হামলা চালিয়ে বহু পাকিস্তানি সেনা হত্যার দাবি তোলে। 

তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তান যে একসময় আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল—তারাই আজ সীমান্তে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। উল্লেখ্য, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত প্রথম তালেবান সরকারের স্বীকৃতি দেওয়া তিনটি দেশের একটি ছিল পাকিস্তান।

নিউইয়র্ক টাইমসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার রাতের সংঘর্ষ দুই দেশের মধ্যে সংঘাতকে বৃহত্তর আকারে বিস্তৃত করতে পারে। প্রায় ১ হাজার ৬০০ মাইল দীর্ঘ দুর্গম পাহাড়ি সীমান্তজুড়ে নিয়মিত লড়াই চলছে, যা কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও জটিল করছে।

পাকিস্তানের অভিযোগ, আফগানিস্তান নিষিদ্ধ সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানকে (টিটিপি) আশ্রয় দিচ্ছে—যাদের হামলায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শতাধিক পাকিস্তানি সেনা ও নিরাপত্তা সদস্য নিহত হয়েছে। ইসলামাবাদ আরও দাবি করছে, তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত টিটিপিকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হলে তা কেবল দুই দেশ নয়, বরং পুরো দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে পারে।

সংঘাতের প্রভাব ইতিমধ্যেই দুই দেশের সম্পর্কের ওপর পড়তে শুরু করেছে। পাকিস্তান আফগানিস্তানের অন্যতম শীর্ষ রপ্তানি অংশীদার এবং গত কয়েক দশক ধরে লাখ লাখ আফগান শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু শনিবারের সংঘর্ষের পর প্রধান সীমান্ত ক্রসিংগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পাকিস্তান সরকারের নির্দেশে দেশটিতে বসবাসরত হাজারো আফগানকে বহিষ্কারের প্রক্রিয়াও ত্বরান্বিত হয়েছে।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুই দেশের মধ্যে শান্তি স্থাপনে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। দ্য ডন জানিয়েছে, রোববার ওয়াশিংটন থেকে ইসরায়েলগামী বিমানে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, 'আমি শুনেছি পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। আমি বলেছি, আমার ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুক তারা—কারণ আমি যুদ্ধের ভালো সমাধান দিতে পারি। আমি লাখ লাখ জীবন বাচাতে পারি'

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মুখপাত্র লিন জিয়ান এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, চীন উভয় দেশকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছে এবং নিজেদের নাগরিক ও বিনিয়োগ সুরক্ষার স্বার্থে শান্তিপূর্ণ সমাধান প্রত্যাশা করছে। তিনি আরও বলেন, বেইজিং পাকিস্তান-আফগান সম্পর্কের উন্নয়নে গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে আগ্রহী।

এদিকে, রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে নতুন মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন সোহাইল আফ্রিদি। সোমবার অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশনে স্পিকার বাবর সালিম সওয়াতি তার নাম ঘোষণা করেন। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) মনোনীত এই প্রার্থী ৯০ ভোট পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেন। তবে বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বয়কট করে একে 'অবৈধ ও অসাংবিধানিক' আখ্যা দিয়েছে।

বিরোধী নেতা ড. ইবাদুল্লাহ বলেন, 'যখন আলি আমিন গান্ধাপুর এখনো মুখ্যমন্ত্রীর পদে রয়েছেন, তখন নতুন মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনের কোনো বৈধতা নেই।' যদিও বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী গান্ধাপুর অধিবেশনে বক্তব্য দিয়ে আফ্রিদিকে অভিনন্দন জানান এবং বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য দেশের শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা।' তিনি আরও যোগ করেন, দলের প্রতিষ্ঠাতার নির্দেশেই পদত্যাগ করেছেন এবং বিরোধীদের প্রতি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্মান করার আহ্বান জানান।