
চট্টগ্রাম নগরের আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারে স্টিল গার্ডার থেকে কমপক্ষে ১৪০টি নাট-বোল্ট ও ৫৩টি ওয়াশার খুলে নিয়েছে মাদকাসক্তরা। সিটি করপোরেশনের তদন্তে এ বিষয়টি ধরা পড়েছে। এতে ঝুঁকির মুখে পড়েছে নগরের প্রধান সড়কের ওপর নির্মিত ফ্লাইওভারটি।
সিডিএর সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রতিদিন অন্তত ৮০ হাজার যানবাহন চলাচল করে এই ফ্লাইওভার দিয়ে। সাত বছর আগে প্রায় সাতশ কোটি টাকা ব্যয়ে ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করেছিল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এরপর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তর করা হয়। নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের গাইডলাইন অনুযায়ী, নাট-বোল্ট শিথিল হয়ে পড়েছে কিনা কিংবা কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে কিনা, তা প্রতিবছর অন্তত একবার নিরীক্ষা করার কথা। সাত বছরে একবারের জন্যও নিরীক্ষা করেনি সিটি করপোরেশন। ফলে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফ্লাইওভারের উচ্চতা ও কাঠামোগত জটিলতার কারণে এগুলো পরীক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষণে দক্ষ শ্রমিক এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি (যেমন–ক্রেন ও ম্যান-লিফট) প্রয়োজন। এ ধরনের সরঞ্জাম কিংবা প্রশিক্ষিত কর্মী না থাকায় রুটিন পরিদর্শন কখনও হয়নি। ফ্লাইওভারের বিয়ারিং, ক্রস ব্রেসিং, জয়েন্ট প্লেট, পিয়ার ক্যাপ ও এক্সপানশন জয়েন্ট–এসব জায়গায় নাট-বোল্ট শিথিল বা অনুপস্থিত আছে কিনা, তা পর্যবেক্ষণ করা দরকার। নাট-বোল্টগুলোর কারিগরি সক্ষমতাবিষয়ক একটি সনদ দেওয়া আবশ্যক।
প্রতিবেদনে চট্টগ্রামের ফ্লাইওভারগুলোর নিরাপত্তা, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা জোরদারে গঠিত কমিটি ১০ দফা সুপারিশ করেছে।
তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রিফাতুল করিম চৌধুরী বলেন, ‘উড়াল সড়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থেকে নাট-বোল্ট চুরি হওয়া অত্যন্ত উদ্বেগজনক বিষয়। গার্ডারগুলো যে উচ্চতায় স্থাপিত, সেখান থেকে এসব খুলে নেওয়া অস্বাভাবিক বলে মনে হয়। ভাসমান মাদকসেবীদের একটি চক্র এই চুরির সঙ্গে জড়িত। যদিও তাৎক্ষণিকভাবে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। তবে দীর্ঘ মেয়াদে এটি কাঠামোগত ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এ জন্য উড়াল সড়কে নিরাপত্তা জোরদার ও নজরদারি বাড়ার বিষয়ে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।’
পাঁচলাইশ থানার ওসি মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, ‘মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে ২ নম্বর গেট এলাকায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর মুরাদপুর থেকে লালখানবাজার পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভারটি নির্মাণ শুরু হয়। ৬৯৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ফ্লাইওভারটি যান চলাচল শুরু হয় ২০১৭ সালের ১৬ জুন। ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ফ্লাইওভারটি সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তর করা হয়। তবে সাত বছর পার হলেও ফ্লাইওভারের কোনো বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ বা নিরীক্ষা হয়নি। ফ্লাইওভারের নিচে ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে করা সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পও এখন ধ্বংসের মুখে। মরে গেছে ৯০ হাজার গাছ। চুরি গেছে এমএস গ্রিল ও আলোকসজ্জার খুঁটি।
Comments