Image description

মাত্র একটি পরিবারের হাত ধরে শুরু। এখন সেই উদ্যোগই বদলে দিয়েছে ৫ হাজার পরিবারের জীবন। কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাবুটিপাড়া ইউনিয়নের দৈয়ারা গ্রামসহ আশপাশের পাঁচটি গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে সুতার রঙিন দোলনা তৈরির এক নীরব বিপ্লব।

গ্রামীণ নারীদের হাতের ছোঁয়ায় তৈরি রঙিন সুতো ও বাঁশের দোলনা এখন এই অঞ্চলের প্রধান জীবিকা। ৩০ বছর আগে দৈয়ারা গ্রামের আব্দুল মজিদ ভুঁইয়ার ছেলে কবির ভুঁইয়া প্রথম শুরু করেছিলেন সুতার দোলনা তৈরি। তার উদ্যোগ আজ হয়ে উঠেছে স্থানীয় অর্থনীতির চালিকাশক্তি।

বর্তমানে দৈয়ারা, গান্দ্রা, তেলুয়া মাইনকা, বাবুটিপাড়া ও পাহাড়পুর—এই পাঁচটি গ্রামের প্রায় ৫ হাজার পরিবার এ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। দোলনা তৈরির পাশাপাশি এখন গড়ে উঠেছে ৩টি সুতা ও রং কারখানা, যেখানে নারী-পুরুষ উভয়ে কাজ করছেন।

দৈয়ারা গ্রামের দোলনা কারিগর দেলোয়ারা বেগম বলেন, আমি ১৮ বছর ধরে দোলনা বুনি। আগে বাজারে বিক্রি করতাম, এখন মহাজনের কাছ থেকে মজুরিতে কাজ করি। আমাদের মজুরি বাড়েনি, কিন্তু খরচ বেড়েছে। সরকার যদি স্বল্প সুদে ঋণ দিত, আমরা নিজেরাই ব্যবসা চালাতে পারতাম।”

প্রতি দোলনায় কারিগরদের আয় তুলনামূলক কম।
বাচ্চাদের দোলনা: খরচ ১৮০ টাকা, বিক্রি ২২০ টাকা, শোয়ার দোলনা: খরচ ৩৫০ টাকা, বিক্রি ৪০০ টাকা, হেসক দোলনা: খরচ ১৮০০ টাকা, বিক্রি ২১০০ টাকা।

শুধু নারীরাই নন, দোলনা তৈরির ফ্রেম বা চাক তৈরি করেন এলাকার পুরুষেরা। কেউ বাড়ির উঠানে, কেউবা ঘরের ভেতরে সারিবদ্ধভাবে দোলনা তৈরি করেন। প্রতি মাসে এখান থেকে প্রায় ২ লাখ দোলনা তৈরি হয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে—ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ নানা শহরে।

ব্যবসায়ী মোসলেম মিয়া জানান, এলাকার ঘরে ঘরে গিয়ে দোলনা কিনে এনে ঢাকাসহ বড় শহরে বিক্রি করি। রঙিন সুতার দোলনার বাজার এখন খুব ভালো।

দোলনা শিল্পের পথিকৃৎ কবির ভুঁইয়া বলেন, ঢাকায় এক ব্যবসায়ী আমাকে সুতার দোলনার ছবি দেখিয়ে এমন দোলনা বানাতে বলেন। দুই মাস চেষ্টা করে তৈরি করি প্রথম দোলনা। এরপরই শুরু হয় গ্রামের নতুন ইতিহাস।

বাবুটিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরমান মিয়া বলেন, এই দোলনা শিল্প বহু বছর ধরে এ এলাকার মানুষের জীবিকা। কিন্তু সরকারি কোনো সহায়তা তারা পায়নি। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই শিল্প আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে।

মুরাদনগরের নারীদের হাতের বোনা এই দোলনা শুধু শিশুদের আনন্দই দেয় না, এটি এখন হাজার পরিবারের জীবনচক্র ঘোরানোর প্রতীক। সরকারি সহায়তা ও আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দৈয়ারার দোলনা শিল্প হতে পারে বাংলাদেশের অন্যতম সফল কুটির শিল্পের উদাহরণ।