Image description

রাজধানীর নিউ ইস্কাটন রোডের ওয়াক্ফ ভবনের সামনে একটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় এক পথচারী আহত হয়েছেন। রোববার (১৬ নভেম্বর) সকাল ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে এই ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। 

আহত ব্যক্তির নাম আবদুল বাসির (৫০)। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি হেঁটে বাংলামোটরে তার অফিসে যাওয়ার পথে ককটেল বিস্ফোরণে আহত হন। এতে আবদুল বাসিরের পায়ে ও হাতে জখম হয়েছে।

তিনি গণমাধ্যমকে জানান, প্রতিদিনের মতো আজ সকালেও হেঁটে অফিসে যাচ্ছিলেন। ওয়াক্ফ ভবনের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ একটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়।

তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা ওয়াক্ফ ভবনের সামনে দিয়ে যাওয়া উড়ালসড়কের ওপর থেকে এই ককটেলটি ছুড়ে মারা হয়েছে।’

এর আগে, বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন, আগারগাঁওয়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সামনে, পল্লবী, হাতিরঝিল, মৌচাক ও মিরপুরসহ ছয়স্থানে হাতবোমা ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার বিকেল থেকে রাত ৮টা ২০ মিনিটের মধ্যে এসব বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে জানায় পুলিশ। এর মধ্যে রাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে এডিবি ভবনের সামনে একটি হাত বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

শনিবার রাত সোয়া ১০টার দিকে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের ১ নম্বর প্লাটফর্মের সামনে একটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সন্দেহভাজন একজন দুর্বৃত্ত পালিয়ে যায়। বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী–আরএনবির কমান্ড্যান্ট মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অভিযুক্তকে শনাক্তের চেষ্টা চলছে। 

ককটেল বিস্ফোরণে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘বিষয়টিকে কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে না দেখে যত দ্রুত সম্ভব জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’

শফিকুল ইসলাম জানান, ঘটনার পর থেকে স্টেশনের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

শেরেবাংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি ইমাউল হক বলেন, এডিবি ভবনের সামনের সড়কে বিস্ফোরণে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

মোটরসাইকেলে এসে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্ত। আসামিদের আটক করতে ইতোমধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে। এরপর রাত সাড়ে ১০টার দিকে আইডিবি ভবনের সামনে মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে আরেকটি ককটেল ফাটানো হয় বলে জানা গেছে।

এছাড়া সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটের দিকে মিরপুরের পল্লবী থানা এলাকায় মেট্রোরেলের স্টেশনের নিচে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তবে স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সেখানে যাওয়ার আগেই তারা পালিয়ে যায়।

তবে এতে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

পল্লবী থানার ওমি মফিজুর রহমান বলেন, ‘মেট্রোরেলের একটি পিলারের নিচে দুটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তবে সেটি ককটেল নয় চকলেট পটকা, তার ওপরে স্কচটেপ মারা হয়েছে। ভীতি সৃষ্টি করার জন্য এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটায় দুর্বৃত্তরা।’

এদিকে হাতিরঝিলের মধুবাগ ব্রিজের নিচেও একটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। বিস্ফোরণের পর সেতুর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরে যায়।

হাতিরঝিল থানার ওসি মোহাম্মদ রাজু বলেন, ‘সন্ধ্যার পরে হাতিরঝিল মধুবাগ ব্রিজের নিচে একটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে পুলিশ কাজ করছে।’

উল্লেখ্য, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার দিন ছিল ১৩ নভেম্বর। সেদিনটিতে ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। ৭ নভেম্বর রাত থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ও বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা শুরু হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আগামীকাল সোমবার (১৭ নভেম্বর) এ মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য করেছেন।

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) বেলা ১২টা ৯ মিনিটে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এদিন নির্ধারণ করেন। ট্রাইব্যুনালের বাকি সদস্যরা হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

এ মামলার অপর দুই আসামি হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। সাবেক আইজিপি মামুন রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন।

এই রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ অনলাইনে আবার কর্মসূচির কথা বলছে।