চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল পিপিপি প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষরের আগে সরকারি শর্ত পূরণ না হওয়ায় নতুন করে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে সুপারিশকৃত শর্তগুলো পরিপূর্ণ করে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) কমিটি ও পিপিপি কর্তৃপক্ষ থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু ডেনমার্ক ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালস বিভির সাথে চুক্তি স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে সেই গুরুত্বপূর্ণ ধাপটি উপেক্ষিত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত ১২ নভেম্বর অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ৩৭তম সভায় লালদিয়া টার্মিনাল প্রকল্পটিকে শর্তসাপেক্ষে ‘নীতিগতভাবে অনুমোদনযোগ্য’ বলা হয়। শর্তটি ছিল লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের ভেটিং পাওয়া সাপেক্ষে। কিন্তু ১৬ নভেম্বর স্বাক্ষরিত ভেটিং রিপোর্টে ছয় দফায় আইনি ও কারিগরি অসংগতি চিহ্নিত হয়েছে। লেজিসলেটিভ বিভাগ সুনির্দিষ্টভাবে মতামত ও পরামর্শ তুলে ধরে এসব বাস্তবায়নের পর চুক্তি চূড়ান্ত করার অনুরোধ জানালেও, সেই শর্তগুলো পরিপূর্ণ না করেই চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে।
ভেটিং রিপোর্টে চিহ্নিত প্রধান ত্রুটিগুলোর মধ্যে ছিল-চুক্তির খসড়ায় মূল অনুমোদনের তারিখ ফাঁকা রাখা, কর-শুল্ক-রাজস্ব সংক্রান্ত আর্টিকেলে (১১.১ (বি), ১৩.৫, ৫২.২ (সি), ৬২.২ ইত্যাদি) স্পষ্টতার অভাব এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মতামত নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা যাচাই না করা।
এক্ষেত্রে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি)-এর ক্ষেত্রেও একই ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল, যেখানে এনবিআরের ভেটিং না থাকায় আরএসজিটি কর্তৃক দীর্ঘদিন কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া প্রিমিয়াম, ইন্স্যুরেন্স ও পেমেন্ট কাঠামোতে আর্থিক ধারার অস্পষ্টতা থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের পরামর্শ নেওয়ার আবশ্যকতা পরীক্ষার কথা বলা হয়।
কমপেনসেশন ইভেন্ট (আর্টিকেল ৪৭) এবং ইভেন্ট অব ডিফল্ট চুক্তির জরুরি ধারাগুলোও পুনরায় পরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হয়। পিপিপি আইন, ২০১৫ এবং পিপিপি ক্রয় বিধিমালা, ২০১৮-এর ব্যাখ্যা অনুযায়ী, শর্তসাপেক্ষ অনুমোদন কেবল একটি নীতিগত সম্মতি, যা শর্ত পূরণ ছাড়া চুক্তিকে বৈধতা দেয় না।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, শর্ত পূরণ না করেই চুক্তি করলে ভবিষ্যতের পিপিপি প্রকল্পগুলোর শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে। তবে চুক্তির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বলেন, ‘লালদিয়া দেখিয়ে দিয়েছে পিপিপি শুধু তত্ত্বে নয়, বাস্তবেও কার্যকর।’
অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী উচ্চপর্যায়ের পরামর্শে নীতিগত অনুমোদন পাওয়ার পরই চুক্তিতে এগিয়েছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, এই আইনি কাঠামো উপেক্ষা করার ফলে ভবিষ্যতে চুক্তির বৈধতা আদালতে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে পিপিপি কাঠামোর প্রতি আস্থা নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।




Comments