Image description

বাইরেটা মেটে রঙের খসখসে, অনেকটা আলুর মতো দেখতে। কিন্তু খোসা ছাড়ালেই ভেতরে বেরিয়ে আসে অমৃতের মতো মিষ্টি শাঁস। বলছিলাম সফেদার কথা। আমাদের দেশে অত্যন্ত পরিচিত এবং সহজলভ্য একটি ফল এটি। ইংরেজিতে একে বলা হয় ‘সাপোডিলা’ (Sapodilla)। সস্তা এবং সারা বছর পাওয়া যায় বলে অনেকেই এই ফলটিকে খুব একটা গুরুত্ব দেন না। কিন্তু পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, ছোট এই ফলটি পুষ্টির এক বিশাল ভাণ্ডার। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। শরীর সুস্থ রাখতে ও রোগ প্রতিরোধে সফেদার জুড়ি মেলা ভার।

আসুন জেনে নেওয়া যাক সফেদা খাওয়ার দারুণ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা।

তাৎক্ষণিক শক্তির উৎস
কাজের চাপে ক্লান্তি অনুভব করছেন? একটি সফেদা খেয়ে নিন। সফেদায় প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি (ফ্রুক্টোজ ও সুক্রোজ) থাকে, যা শরীরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই রক্তের মিশে যায় এবং তাৎক্ষণিক শক্তি যোগায়। তাই ক্রীড়াবিদ বা যারা বেশি কায়িক পরিশ্রম করেন, তাদের জন্য এটি দারুণ একটি এনার্জি বুস্টার।

হজমশক্তি বাড়ায় ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
সফেদায় প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার বা আঁশ থাকে। এই আঁশ প্রাকৃতিক ল্যাক্সেটিভ হিসেবে কাজ করে, যা হজমশক্তি বাড়াতে এবং দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। পেটের পীড়া বা গ্যাসের সমস্যায়ও এটি বেশ কার্যকরী।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
এই ফলে রয়েছে ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘সি’। ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে এবং বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। এছাড়া এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি র‍্যাডিকেল ধ্বংস করে মারণব্যাধি ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।

হাড়ের সুরক্ষায়
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের সমস্যা দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। সফেদায় রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং আয়রন। হাড় মজবুত রাখতে এবং হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে এই উপাদানগুলো অত্যন্ত জরুরি।

ত্বক ও চুলের যত্নে
সফেদাকে বলা হয় ‘বিউটি ফ্রুট’। এতে থাকা ভিটামিন ‘ই’ এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং বয়সের ছাপ বা বলিরেখা পড়তে বাধা দেয়। পাশাপাশি চুলের গোড়া শক্ত করতে এবং চুল পড়া কমাতেও সফেদা কার্যকর।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
সফেদায় পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। যারা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য এটি উপকারী ফল হতে পারে। এটি রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রেখে হার্টকে সুস্থ রাখে।

মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি
সফেদা স্নায়ু শান্ত করতে সাহায্য করে। অনিদ্রা, উদ্বেগ এবং বিষণ্নতা কমাতে এই ফলটি বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

সতর্কতা
সফেদা নিঃসন্দেহে উপকারী, তবে এতে চিনির পরিমাণ এবং ক্যালোরি অনেক বেশি। তাই যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন বা ওজন কমাতে চাইছেন, তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পরিমিত পরিমাণে সফেদা খাওয়া উচিত। এছাড়া কাঁচা সফেদা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন, কারণ এতে থাকা কষ বা ল্যাটেক্স মুখে চুলকানি বা আলসার সৃষ্টি করতে পারে।

মৌসুমি ফল হিসেবে তো বটেই, সারা বছরের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে খাদ্যতালিকায় নিয়মিত সফেদা রাখা উচিত। সস্তায় এমন পুষ্টিকর ফল খুব কমই আছে। তাই সুস্থ থাকতে আজই অভ্যেস করুন সফেদা খাওয়ার।