পুলিশ বাহিনীকে জনবান্ধব, জবাবদিহিমূলক ও প্রভাবমুক্ত করতে ‘পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে প্রধান করে এই পুলিশ কমিশন গঠিত হবে। কমিশনের অন্য সদস্যরা হবেন- একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ, অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক (কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত) এবং মানবাধিকার ও সুশাসন বিষয়ে অন্তত ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি।
কমিশনের সদস্যদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘একটি উচ্চপর্যায়ের বাছাই কমিটির মাধ্যমে কমিশনের সদস্যদের নাম প্রস্তাব করা হবে। সেই তালিকা থেকে সরকার নিয়োগ দেবে। বাছাই কমিটিতে থাকবেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব এবং জাতীয় সংসদের দুজন প্রতিনিধি।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘পুলিশ যাতে রাজনৈতিক বা অন্য কোনো প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করতে পারে এবং মানবাধিকারের প্রতি সংবেদনশীল হয়, সে বিষয়ে কমিশন সরকারকে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে। এছাড়া পুলিশের আধুনিকায়ন ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা চিহ্নিত করবে এই কমিশন।’
কমিশনের অন্যতম প্রধান কাজ হবে পুলিশের বিরুদ্ধে নাগরিকদের অভিযোগ তদন্ত ও নিষ্পত্তি করা। পাশাপাশি পেশাগত বিষয়ে পুলিশ সদস্যদের কোনো অভিযোগ বা ক্ষোভ থাকলে, সেগুলোরও সুরাহা করবে কমিশন। পুলিশি কার্যক্রমে দক্ষতা, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় কমিশন কাজ করবে।
সরকার কমিশনের সুপারিশ মানতে বাধ্য কি না এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘পরামর্শ বা সুপারিশ সাধারণত কেউ মানতে বাধ্য থাকে না। তবে এই কমিশন পুলিশ ও জনগণের মধ্যে একটি সেতু হিসেবে কাজ করবে। আধুনিকায়ন, মানবাধিকার রক্ষা এবং পুলিশের পেশাগত সংকট নিরসনে সরকারের সঙ্গে পুলিশের যোগসূত্র স্থাপন করাই হবে এই কমিশনের কাজ।’




Comments