Image description

ঢাকার মোহাম্মদপুরে মা ও মেয়েকে হত্যার ঘটনায় ওই বাসায় নতুন কাজে যোগ দেওয়া গৃহকর্মীকেই একমাত্র সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। তবে এখন পর্যন্ত ওই নারীকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।

তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, হত্যাকাণ্ডের (সোমবার, ৮ ডিসেম্বর) মাত্র চার দিন আগে বাসাটিতে কাজ শুরু করেন ওই নারী। এই চার দিনই তিনি বোরকা পরে অথবা মুখমণ্ডল ঢেকে যাতায়াত করতেন। ফলে সিসিটিভি ফুটেজে তার চেহারা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। নিহত মা-মেয়ে ছাড়া আর কেউ তার চেহারা না দেখায় তার নাম-পরিচয় সম্পর্কেও নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।

এর আগে, সোমবার সকালে মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের একটি বহুতল ভবনের সপ্তম তলায় নিজেদের বাসায় লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তার মেয়ে নাফিসা নাওয়াল বিনতে আজিজকে (১৫) ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ওই গৃহকর্মীকে একমাত্র আসামি করে সোমবার রাতেই মোহাম্মদপুর থানায় হত্যা মামলা করেন নিহত লায়লার স্বামী আজিজুল ইসলাম।

পরে মা ও মেয়ের মরদেহ উদ্ধারের পর ভবনের এক নিরাপত্তাকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছিল পুলিশ।

মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাহ উদ্দিন মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) রাতে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ভবনের নিরাপত্তাকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, লায়লা আফরোজের পরিবার তাকে বলেছিল, তাদের একজন গৃহকর্মী প্রয়োজন। চার দিন আগে এক নারী বাসার সামনে এসে কাজের সন্ধান করলে তাকে লায়লার কাছে নিয়ে যান তিনি। ওই নারীর সঙ্গে তার কোনো পরিচয় ছিল না।’

নিতদের স্বজনরাও জানান, ঘটনার চার দিন আগে ভবনের নিরাপত্তাকর্মীর মাধ্যমে ওই গৃহকর্মীকে কাজে নেন লায়লা। গৃহকর্মী সকালে আসতেন এবং কাজ শেষে চলে যেতেন। তার পরিচয় ও মুঠোফোন নম্বর জানতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু নানা কথা বলে তিনি তার পুরো পরিচয় ও মুঠোফোন নম্বর দেননি।

আজিজুল ইসলাম পেশায় শিক্ষক। মোহাম্মদপুরে পরিবার নিয়ে থাকেন। সোমবার সকাল ৭টার দিকে তিনি তার কর্মস্থল উত্তরায় যান। কর্মস্থলে থাকাকালে স্ত্রীর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে বেলা ১১টার দিকে বাসায় ফেরেন। এসে দেখতে পান, তার স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা। স্ত্রী রক্তাক্ত-জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন। আর মেয়ের গলার নিচে ডান পাশে কাটা। মেয়ে গুরুতর অবস্থায় বাসার প্রধান ফটকে পড়ে আছে। মেয়ের এ অবস্থা দেখে দ্রুত তাকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতালে নেয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

মামলায় আজিজুল উল্লেখ করেন, তিনি বাসার সিসিটিভি ফুটেজে দেখেছেন, আসামি সকাল ৭টা ৫১ মিনিটের সময় কাজ করার জন্য বাসায় আসেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের সময় আসামি তার (বাদী) মেয়ের স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় একটি মুঠোফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে যান।

মামলায় বাদী লিখেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন যে অজ্ঞাত কারণে আসামি তার (বাদী) স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরি বা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ইবনে মিজান বলেন, ‘গৃহকর্মীর বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। এখনো বলার মতো অগ্রগতি হয়নি। তবে তদন্ত চলমান।’

এদিকে হত্যাকাণ্ডের শিকার মা–মেয়েকে মঙ্গলবার নাটোরে দাফন করা হয়েছে। বিকাল ৩টার দিকে নাটোর নবাব সিরাজ–উদ–দৌলা সরকারি কলেজ মাঠে জানাজা শেষে স্থানীয় একটি কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়। দুপুরের আগে তাদের মরদেহ এলাকায় পৌঁছালে একনজর দেখতে ছুটে আসেন আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীরা। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনেরা। জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তারা এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।