Image description

অগ্নিকাণ্ডের সময় আমরা সাধারণত আগুনের শিখা নিয়ে যতটা আতঙ্কিত থাকি, ধোঁয়া নিয়ে ততটা ভাবি না। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যুর প্রধান কারণ সরাসরি পুড়ে যাওয়া নয়, বরং ধোঁয়ার মাধ্যমে বিষাক্ত গ্যাস ফুসফুসে প্রবেশ করা। আগুনের ধোঁয়ায় কার্বন মনোক্সাইডসহ অনেক প্রাণঘাতী গ্যাস থাকে, যা কয়েক মিনিটের মধ্যে মানুষকে অচেতন করে দিতে পারে।

অগ্নিকাণ্ডের সময় ধোঁয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করার কিছু কার্যকর জীবন রক্ষাকারী কৌশল নিচে আলোচনা করা হলো:

মাটির কাছাকাছি থাকুন 

বিজ্ঞান বলে, ধোঁয়া সবসময় ওপরের দিকে ওঠে। ঘরের সিলিংয়ের দিকে ধোঁয়া এবং বিষাক্ত গ্যাস বেশি থাকে, আর মেঝের কাছাকাছি অংশে তুলনামূলক পরিষ্কার অক্সিজেন পাওয়া যায়। তাই আগুন লাগলে সোজা হয়ে না হেঁটে হামাগুড়ি দিয়ে বা মেঝের ওপর দিয়ে গড়িয়ে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার চেষ্টা করুন। নাক ও মুখ মেঝের যত কাছাকাছি থাকবে, শ্বাস নেওয়া তত সহজ হবে।

ভেজা কাপড়ের ব্যবহার

ধোঁয়া থেকে বাঁচতে দ্রুত একটি কাপড় (রুমাল, তোয়ালে বা জামার অংশ) পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিন। এবার সেই ভেজা কাপড় দিয়ে নাক ও মুখ চেপে ধরুন। ভেজা কাপড় ধোঁয়ার মধ্যকার বিষাক্ত কণা এবং গরম ছাই ফিল্টার হিসেবে আটকে দেয়, ফলে আপনার ফুসফুসে সরাসরি গরম ধোঁয়া প্রবেশ করতে পারে না। যদি পানি না পাওয়া যায়, তবে শুকনো কাপড় হলেও ব্যবহার করুন।

দরজা খোলার আগে সতর্কতা

এক রুম থেকে অন্য রুমে যাওয়ার সময় হুট করে দরজা খুলবেন না। দরজার হাতল বা দরজার ওপরের অংশে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে স্পর্শ করে দেখুন সেটি গরম কি না। যদি দরজা গরম মনে হয়, বুঝবেন ওপাশে আগুনের তীব্রতা বেশি এবং ধোঁয়া সেখানে জমা হয়ে আছে। সেক্ষেত্রে ওই দরজা না খুলে বিকল্প কোনো পথ বা জানালা দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করুন।

ফাঁকফোকর বন্ধ করে দিন

যদি আপনি ধোঁয়ার কারণে ঘর থেকে বের হতে না পারেন এবং ভেতরে আটকা পড়েন, তবে দ্রুত দরজা বন্ধ করে দিন। দরজার নিচের ফাঁকা অংশ, জানালার তলা বা ভেন্টিলেটরের মুখ তোয়ালে, চাদর বা বালিশ দিয়ে শক্ত করে বন্ধ করে দিন যাতে বাইরে থেকে ধোঁয়া ভেতরে আসতে না পারে। সম্ভব হলে কাপড়গুলো ভিজিয়ে দিন, এটি আরও কার্যকর হবে।

জানালার কাছে অবস্থান ও সংকেত প্রদান

ধোঁয়াচ্ছন্ন ঘরে আটকা পড়লে জানালার কাছাকাছি থাকুন। তবে ধোঁয়া বেশি হলে জানালা পুরোপুরি খুলবেন না, এতে বাইরের অক্সিজেন পেয়ে ভেতরের আগুন আরও বেড়ে যেতে পারে। জানালার সামান্য অংশ খুলে বাইরের পরিষ্কার বাতাস নেওয়ার চেষ্টা করুন। উজ্জ্বল রঙের কোনো কাপড় বা টর্চলাইট নাড়িয়ে উদ্ধারকারীদের সংকেত দিন। ধোঁয়ার কারণে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হলে চিৎকার কম করুন, কারণ চিৎকার করলে শরীরে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে যায় এবং দ্রুত ক্লান্তি আসে।


অগ্নিকাণ্ডের সময় আতঙ্কিত (Panic) হওয়া যাবে না। আতঙ্ক মানুষের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। মনে রাখবেন, ধোঁয়া থেকে বাঁচতে আপনার প্রথম কাজ হলো নিচু হয়ে যাওয়া এবং নাক-মুখ ঢেকে ফেলা।

জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন
যেকোনো অগ্নিকাণ্ডে দ্রুত ফায়ার সার্ভিসের সহায়তা নিতে কল করুন ৯৯৯ (জাতীয় জরুরি সেবা) নম্বরে।