‘আয়েশা ছিল তার বাবার আদরের। সব সময় খোঁজ নিত। বাবা বলে ডাকত, কত কথা বলত। ওর অনেক স্বপ্ন ছিল-সব পুড়ে ছাই হয়ে গেল। আমি শুধু শেষবারের মতো ওর মুখটা দেখতে চাই।’ এসব বলে বলে আহাজারি করছিলেন আগুনে দগ্ধ হয়ে নিহত সাত বছরের আয়েশার মা নাজমা আক্তার।
পরিস্থিতি মেনে নিতে পারছেন না তিনি। কখনো হাসপাতালের করিডোরে বসে কাঁদছেন, কখনো বিলাপ করে উঠছেন। বলছেন, ‘আমার মেয়ের হত্যাকারীদের বিচার চাই।’
শুক্রবার গভীর রাতে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জের চরমনসা এলাকায় বিএনপি নেতা বেলাল হোসেনের ঘরে পেট্রোল ঢেলে আগুনে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানায়, বেলাল হোসেন সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। চরমনসা এলাকার বাড়িতে শুক্রবার রাতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঘুমিয়েছিলেন। গভীর রাতে ঘরের দরজায় তালা লাগিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। মুহূর্তে আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে ঘুমন্ত আয়েশা অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়। অগ্নিদগ্ধ হন বেলাল হোসেন ও অন্য দুই মেয়ে। পরে স্থানীয়রা তিনজনকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
বেলাল হোসেনের বড় মেয়ে সালমা আক্তার ভবানীগঞ্জ কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তিনি এখন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন। আরেক মেয়ে বিথি আক্তারও দগ্ধ হয়ে ঢাকায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।
শিশু আয়েশার মা বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা আমাদের পুরো পরিবারকে হত্যার উদ্দেশ্যে ঘরের দরজায় বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়েছে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বাঁচাননি-আমার আয়েশাকে কেড়ে নিয়েছে। আমার সব শেষ হয়ে গেছে।’
নিহত আয়েশা আক্তার স্থানীয় ফাইভ স্টার স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলেন। শিশুটির বাবা মো. বেলাল হোসেন একজন ব্যবসায়ী। তিনিও দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আজ শনিবার দুপুরে আয়েশা আক্তারের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আয়েশার মা। বিলাপ করে শুধু বলেন ‘আমি আর কিছু চাই না। শুধু আমার মেয়ের হত্যাকারীদের বিচার চাই।’
স্থানীয়রা জানান, আগুনে বেলাল হোসেনের ঘরে থাকা নগদ টাকা, মোটরসাইকেল ও ব্যাবসার মালামাল পুড়ে গেছে।




Comments