মিয়ানমারে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা আগামী ২৮ ডিসেম্বর। এর আগে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চল দখলের জন্য অভিযান শুরু করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। একদিকে বিমান হামলা, অন্যদিকে আসন্ন নির্বাচনে ভোট দিতে বাধ্য হওয়ার শঙ্কা- এই দুই কারণে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছেন অনেক বাসিন্দা।
দেশটির চিন রাজ্যের এমনই এক বাসিন্দা ইয়াং জা কিম। গত মাসের এক গভীর রাতে তিনি পাশের একটি গ্রাম থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান। কিছুক্ষণ পর মাথার ওপর দিয়ে যুদ্ধবিমান উড়ে যেতে দেখেন। ইয়াং বলেন, সেদিন তিনি ভীষণ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। মনে হয়েছিল জান্তার বিমান তাদের গ্রামেও বোমা ফেলবে। তাই সামনে খাবার আর কাপড় যা পেয়েছিলেন তাই নিয়ে গ্রামের জঙ্গলে পালিয়ে যান।
ইয়াংয়ের বাড়ি চিন রাজ্যের কে-হাইমুয়াল গ্রামে। গত ২৬ নভেম্বর পালানোর সেই স্মৃতি বলতে গিয়ে তাঁর কণ্ঠ কেঁপে ওঠে। একপর্যায়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। পাশে থাকা আরো কয়েকজন নারীও কান্না শুরু করেন। নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছানোর জন্য তারা যে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন, সেটির ট্রমা তাদের চোখে মুখে ফুটে ওঠে।
বাড়ি ছেড়ে পালানোর ক্ষেত্রে ইয়াংয়ের কাছে তাৎক্ষণিক কারণ ছিল বিমান হামলা। তবে তিনি জানান, নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য হওয়ার আশঙ্কাও ছিল আরেক কারণ। ইয়াং বলেন, ‘আমাদের ধরে ফেললে এবং ভোট দিতে অস্বীকার করলে তারা আমাদের জেলে দেবে, নির্যাতন করবে। আমরা পালিয়েছি শুধু এই কারণে, যেন ভোট দিতে না হয়।’
চিন রাজ্যের কিছু বাসিন্দা বলছেন, জান্তার সবশেষ অভিযানটি গত তিন বছরের মধ্যে ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। বাস্তুহারা অনেকে রাজ্যের অন্য অংশে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকেছেন ভারতের মিজোরাম রাজ্যে। সেখানকার ভাফাই গ্রামের একটি জরাজীর্ণ ব্যাডমিন্টন কোর্টে তারা আশ্রয় নিয়েছেন।
৮০ বছর বয়সে নিজের ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন রাল উক থাং। কয়েকদিন জঙ্গলে লুকিয়ে থাকার পর শেষ পর্যন্ত নিরাপদ জায়গায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন। রাল উক বলেন, ‘আমরা সরকারকে ভয় পাই। তারা খুব নিষ্ঠুর। আগেও তাদের সেনাবাহিনী আমাদের ও আশপাশের গ্রামে ঢুকে মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে, নির্যাতন চালিয়েছে এবং ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে।’




Comments