যেকোনো রাজনৈতিক দল যদি তিনটি সুনির্দিষ্ট শর্ত মেনে নেয়, তবেই তাদের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা হতে পারে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই ঘোষণা দেন।

ডা. শফিকুর রহমান জানান, জামায়াতের সঙ্গে কোনো দলের নির্বাচনী ঐক্য বা সমঝোতা হতে হলে তাদের অবশ্যই নিচের তিনটি প্রতিশ্রুতি দিতে হবে:

১. কোনো ধরনের দুর্নীতি করা যাবে না এবং দুর্নীতিবাজকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।
২. সমাজের সর্বস্তরে সবার জন্য সমান বিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং বিচারকার্যে কোনো রাজনীতিবিদ হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না।
৩. রাষ্ট্রীয় সংস্কারের সব সুপারিশ বাস্তবায়নের শতভাগ প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ের কথা উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন, “ছাত্রশিবির এখন আর সাধারণ কোনো সংগঠন নয়। চব্বিশের বিপ্লবের পর এ দেশের ছাত্রসমাজ অকৃত্রিম ভালোবাসা দিয়ে এই সংগঠনকে বরণ করে নিয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ছাত্রশিবিরকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করতে হবে।”

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, গত ৫৪ বছর কোমলমতি ছাত্রদের হাত থেকে কলম কেড়ে নিয়ে তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছিল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এক সময় মিনি-ক্যান্টনমেন্টে পরিণত হয়েছিল। সেই কালো অধ্যায় কাটতে শুরু করলেও এখনো ‘কালো ছায়া’ পুরোপুরি দূর হয়নি। এই ছায়া নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, একদল লোক ছাত্রশিবিরের অগ্রযাত্রা রুখতে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের পথ বেছে নিয়েছে। আদর্শিক লড়াইয়ে ব্যর্থ হয়ে তারা শিবিরকে ‘রগকাটা’ বা ‘গুপ্ত সংগঠন’ বলে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে। কিন্তু দেশের চারটি বড় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদ নির্বাচন ও জনগণের সমর্থন প্রমাণ করেছে যে সাধারণ মানুষ এসব মিথ্যাচারে বিভ্রান্ত নয়।

শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম সাদ্দামের সঞ্চালনায় এই সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন, দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুলসহ দলের শীর্ষ নেতারা।

এছাড়া সংহতি প্রকাশ করে সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার মুখপাত্র রাশেদ প্রধান এবং খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদেরসহ ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। সম্মেলনে সারা দেশ থেকে কয়েক হাজার শিবির সদস্য অংশগ্রহণ করেন।