বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে সব ধরনের সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখা-৬-এর উপসচিব মো. আনোয়ার পারভেজ সই করা এক আদেশ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
আদেশে বলা হয়েছে, বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে আগামী ২-৪ জানুয়ারি খুরুজের জোড় এবং ২২-২৪ জানুয়ারি বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠানের আবেদন করা হয়েছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য সময়সূচি অনুযায়ী খুরুজের জোড় ও বিশ্ব ইজতেমাসহ নির্বাচনের আগে ওই মাঠে কোনো ধরনের সমাবেশ না করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
সূত্র জানায়, আগামী ২-৪ জানুয়ারি তাবলীগ জামায়াত বাংলাদেশ শুরায়ী নেজাম (জুবায়ের পন্থী) ২-৪ জানুয়ারি টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে তিন দিনের খুরুজের জোড় নামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এরই প্রেক্ষিতে তাবলীগ জামায়াত বাংলাদেশ (সাদপন্থী) শুরায়ে নেজাম খুরুজের জোড়ের নামে ইজতেমার আয়োজন করছে বলে সরকারের কাছে অভিযোগ করে জানায়, খুরুজের জোড় বন্ধ না করলে তারা ২২-২৪ জানুয়ারি ইজেতমা করবেন। দুই পক্ষই তাদের অনুষ্ঠান করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেন। সরকার উভয়ের আবেদন নামঞ্জুর করে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কোনো ধরনের সমাবেশ না করার নির্দেশ দিয়ে আদেশ জারি করে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চলতি বছরের ২ নভেম্বর ধর্ম উপদেষ্টার সভাপতিত্বে তাবলিগের উভয় পক্ষের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, ২০২৬ সালে জাতীয় নির্বাচনের আগে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা হবে না। নির্বাচন হওয়া পর নতুন সরকারের তত্ত্বাবধানে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু সম্প্রতি এই সিদ্ধান্ত প্রতিপালনের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়। জুবায়েরপন্থীরা এই প্রথম জোড় ইজতেমার পর আগামী বছরের ২-৪ জানুয়ারি খুরুজের মজমা করার জন্য কাজ শুরু করে।
তারা সারা দেশে চিঠি দিয়ে সাথিদের খুরুজের মজমায় আসার জন্য অনুরোধ করছেন।
এই খবরে সাদপন্থীরা জুবায়েরপন্থীদের বিরুদ্ধে খুরুজের নামে ইজতেমা করার অভিযোগ এনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, ধর্ম উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কাছে আবেদন করে আগামী ২২-২৪ জানুয়ারি বিশ্ব ইজতেমা করার জন্য তারিখ জানিয়ে সহযোগিতা চায়।
এ বিষয়ে বিশ্ব ইজতেমার আইন শৃঙ্খলার দায়িত্বপ্রাপ্ত গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহীন খান চিঠি প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে বলেন, সরকারি আদেশ প্রতিপালনের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ১৯৬৭ সাল থেকে টঙ্গীতে এক পর্বে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ২০১১ সালে স্থান সংকুলান না হওয়ায় দুই ভাগে ইজতেমা শুরু হয়।
২০১৮ সালে জুবায়ের পন্থী ও সাদপন্থীদের মধ্যে বিরোধী ও সংঘাত হওয়ায় একজন মুসল্লী ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এরপর থেকে জুবায়েরপন্থীরা এক পর্ব ও সাদপন্থীরা আরেক পর্ব ভাগ করে নিয়ে ইজতেমা করা শুরু করে।
২০১৮ সালে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে জুবায়েরপন্থী ও সাদপন্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে, ২০২৪ সালে ৪ জনসহ এ পর্যন্ত ৫ জন মুসল্লী নিহত ও কয়েকশত মুসল্লী আহত হন। গত বছর ইজতেমা ময়দানে বড় হত্যাকাণ্ডের কারণে সৃষ্ট জটিলতায় দুই ধাপে তিন পর্বে বিশ্ব ইজতেমা সমাপ্ত হয়।
২০২৬ সালের ইজতেমার প্রাক প্রস্তুতি হিসেবে এ বছর জুবায়েরপন্থীরা ইজতেমা ময়দানে ও সাদপন্থীরা ঢাকার কেরানীগঞ্জে জোড় ইজতেমা সম্পন্ন করে। সরকারি ঘোষণা অনুয়ায়ী, জাতীয় নির্বাচনের পর বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে।




Comments