Image description

রাজনীতির মাঠের আপসহীন নেত্রী হিসেবে পরিচিতি থাকলেও, ক্রীড়াঙ্গনের প্রতি বেগম খালেদা জিয়ার ছিল এক গভীর ও নিবিড় মমতা। কেবল আনুষ্ঠানিকতার খাতিরে নয়, বরং ব্যক্তিগত আগ্রহ এবং দূরদর্শী পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে বাংলাদেশের ফুটবল ও ক্রিকেটের বিকাশে তিনি রেখেছেন অনবদ্য অবদান।

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেশে আন্তর্জাতিক ফুটবলের যে দুয়ার খুলেছিলেন, খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সেই পথকে আরও বিস্তৃত করেন। তার সময়েই এশীয় গণ্ডি ছাড়িয়ে ইউরোপীয় ফুটবল দলগুলোকে ঢাকায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তার আগ্রহে জার্মান কোচ অটো ফিস্টারকে নিয়োগ দেওয়া হলে ১৯৯৫ সালে মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত চার জাতির টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা জয়ের স্বাদ পায়।

২০০৩ সালে ঢাকায় সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের সফল আয়োজন এবং বাংলাদেশের শিরোপা জয়ের মুহূর্তটি ছিল তাঁর অন্যতম বড় সাফল্য। সে সময় সাফজয়ী খেলোয়াড়দের নগদ অর্থের বদলে জমি বরাদ্দ দেওয়ার যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তাঁর যুক্তি ছিল, খেলোয়াড়দের অবসর জীবন যেন নিরাপত্তাহীনতায় না কাটে। সাবেক ফুটবলার ও সংগঠক ছাঈদ হাসান কানন এই সিদ্ধান্তকে দীর্ঘমেয়াদী কল্যাণের অনন্য নজির হিসেবে স্মরণ করেন।

১৯৯১ সালে স্বাধীনতা গোল্ডকাপের ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডান ও আবাহনীর লড়াইয়ে প্রধান অতিথি ছিলেন খালেদা জিয়া। তখন তিনি কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন যেন মাঠ বা পুরস্কার বিতরণের মঞ্চে রাজনীতির প্রভাব না পড়ে। ফলে ভিন্নমতাবলম্বী ক্রীড়া সংগঠকদের সঙ্গে নিয়েই তিনি বিজয়ীদের হাতে ট্রফি তুলে দেন, যা আজও ক্রীড়াঙ্গনে একটি উদাহরণ হিসেবে টিকে আছে।

১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ দল আইসিসি ট্রফি জিতে বিশ্ব ক্রিকেটে আবির্ভূত হওয়ার পর বিরোধী দলে থাকা সত্ত্বেও খালেদা জিয়া জাতীয় দলকে বীরোচিত সংবর্ধনা দিয়েছিলেন। বিসিবির সাবেক সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল জানান, খেলোয়াড়দের সম্মান জানাতে রাজনৈতিক অবস্থানের ঊর্ধ্বে ছিলেন তিনি। ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো বিসিবির ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে মিরপুর ‘হোম অব ক্রিকেট’ প্রতিষ্ঠায় যে অবদান রেখেছেন, তার পেছনেও খালেদা জিয়ার প্রচ্ছন্ন উৎসাহ ছিল।

স্টেডিয়ামের দর্শকদের আজও মনে পড়ে সেই দৃশ্য, যখন ঢাকা স্টেডিয়ামে একটি ফুটবল ফাইনালের পর খুদে নাতনি জাইমা রহমানকে সাথে নিয়ে ট্রফি তুলে দিয়েছিলেন তিনি। সেই আবেগঘন মুহূর্তটি গ্যালারির হাজারো দর্শকের করতালিতে মুখরিত হয়েছিল।

রাজনীতির কঠিন লড়াইয়ের আড়ালে খেলাধুলা ছিল বেগম খালেদা জিয়ার জীবনের এক পরম ভালো লাগার জায়গা। ক্ষমতার বাইরে কিংবা ভেতরে—সর্বদাই দেশের ক্রীড়াবিদদের সাফল্যের সারথি হয়ে থাকতে চেয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসে তাঁর এই পৃষ্ঠপোষকতা ও মমত্ববোধ চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।