Image description

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেনের ওপর ডিম নিক্ষেপের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কর্মী মিজানকে গ্রেফতার করেছে নিউইয়র্ক পুলিশ। সোমবার মধ্যরাতে জন এফ কেনেডি (জেএফকে) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

ঘটনার বিবরণ

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার সফরসঙ্গীরা নিউইয়র্কে পৌঁছান। বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার সময় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কিছু কর্মী উপস্থিত হয়ে ‘জয় বাংলা’, ‘রাজাকার’, ‘টের পাইছে’ সহ অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। এ সময় আওয়ামী লীগ কর্মী মিজান আখতার হোসেনের দিকে ডিম ছুড়ে মারেন, যা তার শরীরে আঘাত করে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনিম জারা প্রমুখ। ঘটনার পর জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা আখতার হোসেন ও তার সঙ্গীদের গাড়িতে তুলে নিরাপদে সরিয়ে নেন।

পুলিশের ব্যবস্থা

বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বাহিনী ও নিউইয়র্ক পুলিশ দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যের ভিত্তিতে নিউইয়র্ক পুলিশ অভিযুক্ত মিজানকে শনাক্ত করে এবং জ্যাকসন হাইটস এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানিয়েছে, মিজানের বিরুদ্ধে জনশৃঙ্খলা ভঙ্গ ও আক্রমণমূলক আচরণের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অতিরিক্ত অভিযোগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

এনসিপি ও বিএনপি নেতারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, এটি কেবল আখতার হোসেনের ওপর নয়, বরং পুরো প্রতিনিধি দলের ওপর একটি সংগঠিত রাজনৈতিক হামলা। এনসিপির এক বিবৃতিতে বলা হয়, “রাজনৈতিক মতভেদ থাকলেও প্রবাসে এমন হিংসাত্মক আচরণ ক্ষমতাসীন দলের অসহিষ্ণুতা ও ভিন্নমত দমনের মানসিকতার প্রকাশ।”

ড. ইউনূসের সফর ও উত্তেজনা

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই সফরকে ঘিরে নিউইয়র্কে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির নেতাকর্মীরা তাকে স্বাগত জানালেও, আওয়ামী লীগ বিমানবন্দর থেকে হোটেল পর্যন্ত বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে। ড. ইউনূস ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে ভাষণ দেবেন। তার সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির শীর্ষ নেতারা।

জনমত ও প্রভাব

এ ঘটনা প্রবাসী বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে এই হামলাকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ ও ‘লজ্জাজনক’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিভক্তির প্রবাসেও প্রভাব ফেলছে, যা আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর।

নিউইয়র্ক পুলিশ এ বিষয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে এবং পরিস্থিতি শান্ত রাখতে বিমানবন্দর ও সংশ্লিষ্ট এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।