Image description

ইসলাম পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার ধর্ম। বাহ্যিক সৌন্দর্য এবং অভ্যন্তরীণ পবিত্রতা—উভয়কেই ইসলামে সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আর এই পবিত্রতার অন্যতম একটি অনুষঙ্গ হলো সুগন্ধি। দুর্গন্ধ যেমন মানুষের মনে বিরক্তি সৃষ্টি করে, তেমনি সুগন্ধি মনকে করে প্রফুল্ল ও সতেজ। ইসলামে সুগন্ধি ব্যবহারকে কেবল শৌখিনতা নয়, বরং একটি ইবাদত বা সওয়াবের কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়, যদি তা নবীজির (সা.) সুন্নত পালনের নিয়তে করা হয়।

নবীজির (সা.) প্রিয় সুগন্ধি
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) নিজে সুগন্ধি অত্যন্ত পছন্দ করতেন এবং সাহাবায়ে কেরামকেও তা ব্যবহারের উৎসাহ দিতেন। নাসায়ী শরিফের এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, “দুনিয়াতে আমার কাছে তিনটি জিনিস অধিক প্রিয়। ১. নারী (স্ত্রী), ২. সুগন্ধি, ৩. আর আমার চোখের শীতলতা বা প্রশান্তি হলো নামাজ।”

নবীজির (সা.) শরীর মোবারক থেকে প্রাকৃতিকভাবেই জান্নাতি সুবাস বের হতো, তবুও তিনি নিয়মিত সুগন্ধি বা আতর ব্যবহার করতেন। হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে কেউ সুগন্ধি উপহার দিলে তিনি তা ফিরিয়ে দিতেন না।” (বুখারি)

ইবাদতে মনোযোগ ও সুগন্ধি
নামাজ ও অন্যান্য ইবাদতের সময় শরীর ও পোশাক সুগন্ধিময় রাখা উত্তম। কারণ, ফেরেশতারা দুর্গন্ধ অপছন্দ করেন এবং সুগন্ধি পছন্দ করেন। মসজিদে যাওয়ার সময়, বিশেষ করে জুমার দিনে সুগন্ধি ব্যবহার করাকে রাসুল (সা.) বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।

হাদিসে এসেছে, “জুমার দিন গোসল করা এবং সাধ্যমতো সুগন্ধি ব্যবহার করা প্রতিটি সাবালক মুসলিমের জন্য কর্তব্য।” (মুসলিম)
সুগন্ধি মনের জড়তা দূর করে এবং ইবাদতে একাগ্রতা সৃষ্টিতে সহায়তা করে। মন ভালো থাকলে ইবাদতেও তৃপ্তি পাওয়া যায়।

সুগন্ধি ব্যবহারের আদব ও শিষ্টাচার
ইসলামে সব কিছুরই একটি নিয়ম বা আদব রয়েছে। সুগন্ধি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও নারী ও পুরুষের জন্য ভিন্ন ভিন্ন নির্দেশনা রয়েছে।
পুরুষের জন্য: পুরুষের জন্য এমন সুগন্ধি ব্যবহার করা উত্তম, যার ঘ্রাণ ছড়ায় কিন্তু রঙ দেখা যায় না। কড়া ও ঝাঁজালো ঘ্রাণযুক্ত আতর পুরুষরা ব্যবহার করতে পারেন।
নারীর জন্য: নারীদের জন্য ইসলামে এমন সুগন্ধি ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যার রঙ প্রকাশ পায় কিন্তু ঘ্রাণ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে না। অর্থাৎ, নারীরা ঘরে বা মাহরাম আত্মীয়দের সামনে সুগন্ধি ব্যবহার করবেন, কিন্তু পরপুরুষের সামনে বা বাইরে যাওয়ার সময় তীব্র সুগন্ধি ব্যবহার থেকে বিরত থাকবেন। কারণ, এটি পর্দার খেলাফ এবং ফিতনার কারণ হতে পারে।

সামাজিক সদ্ভাব ও ব্যক্তিত্ব
সামাজিকভাবেও সুগন্ধি ব্যবহারের গুরুত্ব অপরিসীম। ঘামের দুর্গন্ধ বা অপরিচ্ছন্ন শরীর নিয়ে মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করলে অন্যরা কষ্ট পায়। রাসুল (সা.) কাঁচা পেঁয়াজ বা রসুন খেয়ে (মুখ দুর্গন্ধযুক্ত অবস্থায়) মসজিদে যেতে নিষেধ করেছেন, যাতে অন্য মুসল্লিদের কষ্ট না হয়। সুগন্ধি ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটায় এবং আশেপাশের মানুষের মনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

আধুনিক যুগে অনেকেই কেমিক্যালযুক্ত পারফিউম ব্যবহার করেন। তবে অ্যালকোহলমুক্ত আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করাই উত্তম এবং সুন্নাহসম্মত। সুগন্ধি ব্যবহারের সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলা এবং নবীজির (সা.) সুন্নতের কথা স্মরণ করা উচিত। এতে সামান্য একটু সুগন্ধি মাখাও সওয়াবের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আসুন, আমরা দৈনন্দিন জীবনে পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি সুগন্ধি ব্যবহারের এই সুন্দর সুন্নতটি পালন করার চেষ্টা করি।