Image description

দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকায়, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৩৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ১৮ লাখ ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের বেশি ঋণই এখন খেলাপি। গত বছরের একই সময়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা (১৬.৯৩ শতাংশ)। অর্থাৎ, এক বছরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। এর আগে চলতি বছরের জুনে খেলাপি ঋণ ছিল ৬ লাখ ৮ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি ঋণ আদায়ে নজরদারি ও নীতিমালায় কঠোরতা আরোপ করেছে। আগে যেসব ঋণ পরিশোধ না হওয়া সত্ত্বেও কৌশলে বা অনিয়মের মাধ্যমে কাগজে-কলমে ‘নিয়মিত’ দেখানো হতো, কড়াকড়ির ফলে সেগুলো এখন ‘মন্দ ঋণ’ বা খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে আড়ালে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ ঋণগুলো এখন প্রকাশ্যে আসছে।

প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নামে-বেনামে ব্যাংক থেকে বিপুল অর্থ বের করে নেওয়া হয়েছিল। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময় সঠিক নিয়ম পরিপালন করায় সেই অর্থগুলো খেলাপি হিসেবে গণ্য হচ্ছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, গত সরকারের ছত্রছায়ায় হওয়া লুটপাট এবং বিদেশে অর্থপাচারের বাস্তব চিত্রই এখন পরিসংখ্যানে ফুটে উঠছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। এসব ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের প্রায় ৫০ শতাংশই এখন খেলাপি হয়ে গেছে।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সময় দেশে মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। গত দেড় দশকে সেই অঙ্ক জ্যামিতিক হারে বেড়ে এখন ৬ লাখ ৪৪ হাজার কোটিতে পৌঁছেছে।