বিজয়ের মাস
বিশ্ব মিডিয়ায় পাকিস্তানের নৃশংসতার চিত্র; বাংলাদেশ স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে
১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর মহান মুক্তিযুদ্ধের উত্তুঙ্গ মুহূর্তে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সাড়া পড়ে। এদিন বিশ্বের শীর্ষ মিডিয়াগুলো প্রথমবারের মতো প্রায় একসুরে জানিয়ে দেয়—পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র, আর বাংলাদেশ স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে।
আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয় পাকিস্তানি সেনাদের বর্বরতা, গণহত্যা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের নৃশংস চিত্র, যা বিশ্ববাসীকে আরও স্পষ্টভাবে বাংলাদেশের ন্যায্য সংগ্রামের পাশে দাঁড়াতে উদ্দীপ্ত করে।
নিচে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সেদিনের প্রধান প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হলো;
১. যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম
The New York Times
ঢাকার পতন খুব নিকটে—এমন বিশ্লেষণ প্রকাশ করে। পাকিস্তানি বাহিনীর মনোবল ভেঙে পড়ছে এবং ভারত–বাংলাদেশ যৌথবাহিনী দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে—এই তথ্য তুলে ধরে।
যুদ্ধবিরতির আন্তর্জাতিক চাপ ও মানবিক বিপর্যয়ের বিষয়ও গুরুত্ব পায়।
The Washington Post
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও শরণার্থী সংকটের প্রেক্ষিতে বিশ্বজনমত বাংলাদেশের পক্ষে—এমন বিশ্লেষণ ছাপা হয়।
দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক পালাবদলের ইঙ্গিত দেয়।
২. ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যম
The Times (London)
১০ ডিসেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থান “collapsing fast”। মিত্রবাহিনীর বিজয় প্রায় নিশ্চিত।
ব্রিটিশ সংসদে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে সমর্থন করে তীব্র আলোচনা চলছিল—এ তথ্যও উল্লেখ করা হয়।
The Guardian
বেসামরিক লোকজনের ওপর পাকিস্তান বাহিনীর নৃশংসতা তুলে ধরে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দ্রুত মানবিক হস্তক্ষেপের আহ্বান জানায়।
৩. সোভিয়েত ইউনিয়ন (USSR)
Pravda ও Izvestia
বাংলাদেশে ন্যায্য স্বাধীনতা যুদ্ধ চলছে—এমন সমর্থনমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ভারতের প্রতি সোভিয়েত সমর্থন প্রকাশ্যে তুলে ধরা হয়।
পাকিস্তানি সামরিক জান্তার নৃশংসতাকে “অমানবিক” বলে আখ্যায়িত করে।
৪. ভারতীয় সংবাদমাধ্যম
The Statesman, Ananda Bazar Patrika, Hindustan Times
মিত্রবাহিনীর বিজয়যাত্রার বিস্তারিত মানচিত্রসহ রিপোর্ট প্রকাশ হয়। টাঙ্গাইল প্যারাড্রপ, ময়মনসিংহ-মুক্তি, যশোর-খুলনার পরিস্থিতি ও ঢাকার চারদিক ঘিরে ফেলার খবর গুরুত্ব পায়।
কলকাতায় লাখো শরণার্থীর সংকট তুলে ধরা হয়।
৫. পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম
Dawn (Karachi)
ঢাকার অবস্থা বা পরাজয়ের কথা প্রকাশে মারাত্মক সেন্সরশিপ ছিল। তবে ১০ ডিসেম্বরেই যুদ্ধের ভয়াবহ অবস্থা আড়াল করা কঠিন হয়ে পড়ে।
সরকার বিরোধী আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া চেপে যাওয়ার চেষ্টা করে।
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়:
১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস হওয়ায় স্বাধীন বাংলাদেশের সংগ্রাম বিশেষ গুরুত্ব পায়। বিশ্বে বহু মানবাধিকার সংস্থা পাকিস্তানের গণহত্যার প্রতিবাদ জানায়।
জাতিসংঘে জরুরি নিরাপত্তা পরিষদ অধিবেশনে যুদ্ধবিরতি নিয়ে তীব্র বিতর্ক হয়। যুক্তরাষ্ট্র–চীন পাকিস্তানকে রক্ষা করতে চাপ দিলেও সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেটো দিয়ে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করে।




Comments