
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালসহ বেশ কয়েকজন ক্রিকেট সংগঠক ও কাউন্সিলর। অভিযোগের তীর বিসিবির বর্তমান সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়াঁ, মন্ত্রণালয়ের সচিব, মন্ত্রী পরিষদ সচিব এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নির্বাহী পরিচালকের দিকে।
রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন ডেকে তামিমসহ অন্যান্য ক্রিকেট সংগঠকরা এসব অভিযোগ তুলে ধরেন। তাদের অভিযোগ, বিসিবি সভাপতি ও সংশ্লিষ্ট উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা সাংগঠনিক ক্ষমতা ব্যবহার করে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে নিজেদের পছন্দমতো কাউন্সিলর মনোনীত করতে চান। মন্ত্রণালয়, ক্রীড়া পরিষদ এবং বিসিবির পক্ষ থেকে জেলা ও বিভাগীয় ক্রিকেট সংশ্লিষ্টদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
তামিমের দাবি: সুষ্ঠু নির্বাচন চাই
সংবাদ সম্মেলনে তামিম ইকবাল সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বলেন, “বিসিবির সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। এখানে সরকারি হস্তক্ষেপ কোনোভাবেই কাম্য নয়। নির্বাচনের আগে কাউন্সিলরশিপ নিয়ে পরিবর্তন মেনে নেওয়া হবে না।” তিনি আরও বলেন, “আমি শুধু স্বচ্ছ একটি নির্বাচন চাই, ফলাফল যাই হোক এতে আমার কোনো সমস্যা নেই। স্বচ্ছ নির্বাচন আমার চাওয়া, জিতি বা হারি তা পরের ব্যাপার।”
তামিম বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, “বুলবুল ভাই বলেছিলেন, নির্বাচন কেমন হয় এটা নিয়ে তার ধারণাই নেই। তিনি কিছুই জানেন না, তার ধারণা একদম শূন্য। তিনি যদি কিছু না জেনে থাকেন, তাহলে একটি চিঠি দেখেছেন না? তিনি সাইন করে বলেছেন আগের কাউন্সিলরদের বাদ দেওয়া হবে। শুধুমাত্র অ্যাডহক কমিটি থেকে নেওয়া হবে। নতুন করে ফর্ম পাঠাচ্ছি, যে চিঠিতে তিনি সাইন করেছেন। আগের সব চিঠিতে প্রধান নির্বাহীর সাইন থাকতো। সংবিধান অনুযায়ী কমিটি গঠনের পর তিনি কোথাও সাইন করতে পারেন না। এই চিঠিতে সাইন করে তিনি কোন ক্ষমতাবলে ডিসিদের পাঠিয়েছেন?”
বিএনপি নেতার হুঁশিয়ারি
ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের হয়ে বিসিবির কাউন্সিলর পদ পাওয়া বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “বিসিবি নির্বাচনে সরকারি হস্তক্ষেপ হলে তা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা হবে।” তিনি সরকারি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের ইঙ্গিত দেন।
নির্বাচনের প্রস্তুতি
আগামী ৪ অক্টোবর বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হোসেন। এছাড়া কমিশনে রয়েছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির অতিরিক্ত আইজিপি সিবগাত উল্লাহ এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নির্বাহী পরিচালক (যুগ্ম সচিব)।
তামিমের অবসর নিয়ে স্পষ্ট বক্তব্য
নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ার নিয়ে তামিম বলেন, “আমার অফিসিয়ালি অবসর নেওয়ার দরকার নেই। যদি নির্বাচিত হই, তাহলে আর খেলব না। চ্যারিটি ম্যাচ হলে ভিন্ন কথা।” তিনি স্পষ্ট করেন যে, নির্বাচনে জয়ী হলে তিনি খেলা থেকে সরে দাঁড়াবেন।
ক্রিকেট সংগঠকদের প্রতিবাদ
ক্রিকেট বোর্ড নির্বাচনে সরকারি হস্তক্ষেপ ও সভাপতির ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রতিবাদে জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন তামিম ইকবালসহ বিভিন্ন ক্রিকেট সংগঠক ও কাউন্সিলররা। তারা সবাই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানান এবং সরকারি হস্তক্ষেপ বন্ধের আহ্বান জানান।
বিসিবি নির্বাচনকে ঘিরে উত্তেজনা এবং অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্য দিয়ে ক্রিকেটাঙ্গনে চলছে তুমুল আলোচনা। সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি দৃষ্টি রাখছে ক্রীড়ামোদী জনতা।
Comments