
রংপুরে লাইসেন্স বাণিজ্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদলকে তুলে নিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে নগরীর কাচারী বাজার এলাকা থেকে তাকে জোরপূর্বক তুলে নেওয়া হয়। পরে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অপসারণের দাবিতে স্থানীয় সাংবাদিকরা বিক্ষোভ করেছেন।
লিয়াকত আলী বাদল একুশে টেলিভিশনের রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধি এবং দৈনিক সংবাদের নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে কর্মরত। তিনি জানান, ১৭ সেপ্টেম্বর দৈনিক সংবাদে ‘রংপুরে জুলাই যোদ্ধাদের নামে অটোরিকশার লাইসেন্স, ৫ কোটি টাকা বাণিজ্যের পাঁয়তারা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এই প্রতিবেদনের জেরে রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কাচারিবাজার মোড়ে থাকা অবস্থায় জুলাই যোদ্ধা পরিচয়ধারী এনায়েত আলী (রকি) ফোন করে তার অবস্থান জেনে নেন। এরপর ১৫ থেকে ২০ জনের একটি দল তাকে সিটি করপোরেশনে তুলে নিয়ে যায়। সেখানে তার মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া হয় এবং তাকে মারধর করা হয়।
লিয়াকত আলীর অভিযোগ, এনায়েত আলীর নেতৃত্বে মব তৈরি করে তাকে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতিমার কক্ষের কাছে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে জোর করে কক্ষে ঢোকানোর চেষ্টা করা হয় এবং প্রতিবেদন প্রত্যাহার ও ভুল স্বীকারের জন্য চাপ দেওয়া হয়। তিনি আরও অভিযোগ করেন, এ ঘটনায় রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক শহিদুল ইসলাম এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতিমা ইন্ধন দিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে এনায়েত আলী দাবি করেন, তিনি জুলাই আন্দোলনের একজন রাজবন্দী সৈনিক। তিনি বলেন, “আমাদের কর্মসংস্থানের সুব্যবস্থার জন্য যদি সরকারি কোনো অর্থায়ন কেউ কোনো সাইড দিয়ে করে, সেটাকে নিয়ে লেখালেখি করে জুলাই রাজবন্দীদের বা জুলাই নিয়ে বিকৃত করার কোনো দরকার কি কারও আছে?” সাংবাদিককে হেনস্তার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, লিয়াকতকে আপসে নিয়ে আসা হয়েছে এবং কোনো অসম্মান করা হয়নি।
অন্যদিকে, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতিমা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “রিপোর্টের কারণে মাফ চাওয়ার জন্য সাংবাদিকদের নিয়ে আসার প্রশ্নই ওঠে না। এটা ভিত্তিহীন অভিযোগ।” রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক শহিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনি ঢাকায় মিটিংয়ে রয়েছেন এবং পরে কথা বলবেন।
ঘটনা জানাজানির পর রংপুরে কর্মরত সাংবাদিকরা সিটি করপোরেশনে জড়ো হন। তারা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। তারা জড়িত ব্যক্তিদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অপসারণের দাবি জানান।
রংপুর মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান জানান, “সাংবাদিক হেনস্তার ঘটনায় একজনের নাম আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি। সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে অন্যদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”
লিয়াকত আলীর প্রকাশিত প্রতিবেদনে রংপুরে জুলাই যোদ্ধাদের নামে অটোরিকশার লাইসেন্স বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছিল। এই প্রতিবেদনের পর তিনি হেনস্তার শিকার হন বলে দাবি করেছেন। ঘটনাটি স্থানীয় সাংবাদিক সমাজে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
Comments