Image description

জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর নিয়ে তীব্র অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি ও সময় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতার কারণে এই সংকট তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আজ বুধবার (১৫ অক্টোবর ২০২৫) সন্ধ্যা ৬টায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এক ‘অতি জরুরি’ বৈঠক ডেকেছে। এর আগে কমিশনের সদস্যরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকটি বিটিভি নিউজে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে বলে জানা গেছে।

৬টি সংস্কার কমিশনের ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে জুলাই জাতীয় সনদ তৈরি করা হচ্ছে। আগামী শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) এই সনদে সই হওয়ার কথা ছিল। মঙ্গলবার রাতে সনদের চূড়ান্ত খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে। তবে, সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে এখনো কোনো ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি। কমিশন এ বিষয়ে আলাদা সুপারিশ দেওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে প্রাথমিক ঐকমত্য থাকলেও গণভোটের সময়, ভিত্তি এবং পদ্ধতি নিয়ে মতভিন্নতা রয়েছে। কিছু দল সনদে সই করার আগে বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে স্পষ্ট নিশ্চয়তা চায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মঙ্গলবার রাতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে তাদের কঠোর অবস্থান তুলে ধরেছে। তারা বলেছে, ‘সংবিধান আদেশ’ জারির মাধ্যমে সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে না নেওয়া হলে তারা সনদে সই করবে না। এনসিপি’র দাবি, জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের সময় তারা ছাড় দিয়েছিল, কিন্তু এবার আর কোনো ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। তারা সংবিধান সংস্কারসহ বিভিন্ন সংস্কারের বিষয়ে নতুন করে পুরো আলোচনা শুরু করার পক্ষে।

জুলাই সনদে বাস্তবায়নের পন্থা উল্লেখ না থাকায় জামায়াতে ইসলামী এই সনদে সই করবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। দলটি এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি। তবে, আজ রাতে এ বিষয়ে দলটির একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

জামায়াতে ইসলামীর নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা বুধবার সকালে বলেন, “আমরা সনদের চূড়ান্ত কপি পেয়েছি। যদি রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের বিষয়গুলো সনদে সঠিকভাবে উল্লেখ থাকে, তাহলে আমরা অবশ্যই সই করব। তবে, শুনছি সনদ নিয়ে নানামুখী অপতৎপরতা চলছে।”

বিএনপি সনদের অঙ্গীকার অংশে একটি ধারা যুক্ত করার প্রস্তাব করেছিল, কিন্তু কমিশন তা গ্রহণ করেনি। এ ছাড়া বামপন্থী কয়েকটি দলেরও সনদে সই না করার আশঙ্কা রয়েছে।

গত ৩১ জুলাই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শেষ হয়। এরপর কয়েকটি দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলগুলো ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চালায়। ৯ অক্টোবর এই আলোচনা সমাপ্ত হয়। আলোচনায় গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে ঐকমত্য হয়, কিন্তু গণভোটের ভিত্তি, সময় ও পদ্ধতি নিয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি’র মধ্যে মতপার্থক্য রয়ে গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গণভোটে কী কী প্রশ্ন থাকবে, এটি সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে হবে নাকি আলাদাভাবে, এসব বিষয়ে এখনো কোনো ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ গণমাধ্যমকে জানান, আজ সন্ধ্যার বৈঠকে সনদে সই করা এবং বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হবে। কমিশন দলগুলোর মতামত সমন্বয় করে সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে সরকারের কাছে সুপারিশ পেশ করবে।

জুলাই জাতীয় সনদ বাংলাদেশের সংস্কার প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের অভাবে এই প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আজকের বৈঠক এই সংকট নিরসনে কতটা ফলপ্রসূ হয়, সেটি এখন দেখার বিষয়।