Image description

বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা, সংঘাত ও বিরোধী মত দমনের কারণে ২০২৪ সালে এক লাখ ৫৯ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এদের মধ্য দুই হাজার ৮০০ জন অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে। 

ইন্টারন্যাশনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টার (আইডিএমসি) ও জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এই তথ্য জানিয়েছে।

সর্বশেষ গত মে মাসে আইডিএমসি তাদের ওয়েব সাইটে এ-সংক্রান্ত তথ্য হালনাগাদ করেছে।

এর বাইরে ধর্মীয় সংঘাত, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ওপর হামলাসহ স্থানীয় দ্বন্দ্বকে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে সংস্থা দুটি।

বিশ্বে বাস্তুচ্যুতদের নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে আইডিএমসি।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংস্থা নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের (এনআরসি) অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এটি।

আইওএম এবং আইডিএমসির তথ্য অনুযায়ী, হাজার মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এর মধ্যে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা ছিল চার লাখ ২৬ হাজার। গত এক বছরে রাজনৈতিক সহিংসতায় বাস্তুচ্যুত হয়েছে এক লাখ ৫৯ হাজার বাংলাদেশি।

আইডিএমসি জানিয়েছে, বাংলাদেশে মোট অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির যে হিসাব (পাঁচ লাখ ৮৫ হাজার), তার মধ্যে ১৯৭০ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত পাহাড়ে বাস্তুচ্যুত দুই লাখ ৭৫ হাজার মানুষও অন্তর্ভুক্ত আছে। এই সংখ্যা বাদ দিলে গত ১৬ বছরে রাজনৈতিক সহিংসতায় বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা তিন লাখ ১০ হাজার। বছরে গড়ে ১৯ হাজার ৩৭৫ জন। কিন্তু গত এক বছরে রাজনৈতিক সহিংসতায় বাস্তুচ্যুতির সংখ্যাটি বেশ বড়- এক লাখ ৫৯ হাজার।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, জাতিসংঘের প্রায় সব সংস্থা আইডিএমসির তথ্য ব্যবহার করে থাকে।

জাতিসংঘের স্থানীয় কার্যালয়গুলো, দেশি-বিদেশি এনজিও এবং সরকারি তথ্য ব্যবহার করে প্রতিবেদন তৈরি করে আইডিএমসি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইওএম এবং আইডিএমসির কর্মকর্তারা বলেন, ২০২৪ সালে বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। এ সময় রাজনৈতিক সহিংসতা ও সংঘাত ছাড়াও ধর্মীয় সংঘাত ও স্থানীয় দ্বন্দ্বের মতো ঘটনা ঘটেছে। এতে বিশাল সংখ্যক মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। এদের মধ্যে এখন পর্যন্ত দুই হাজার ৮০০ জনের অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। 

বাকিদের ক্ষেত্রে কী হয়েছে- এ প্রশ্নের জবাবে কর্মকর্তারা জানান, তারা বাংলাদেশে রয়েছেন, নাকি বিদেশে চলে গেছেন, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

আইডিএমসি এবং আইওএমের তথ্য মতে, সংঘাত ও সহিংসতায় ২০১৭ সালে সবচেয়ে বেশি ছয় হাজার জন অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত হয়। ২০১০ সালে ৩০০, ২০১৯ সালে ২৯, ২০২০ সালে ২১০, ২০২১ সালে ১৫০ এবং ২০২২ সালে ১২০ জনের বাস্তুচ্যুতির বিষয়ে সংস্থা দুটি নিশ্চিত তথ্য পেয়েছিল।

২০১৭ সালে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে ইমেইল বার্তায় আইডিএমসি জানায়, ২০১৭ সালের জুনে ছয় হাজার বাংলাদেশির অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির ঘটনা আইডিএমসি পর্যবেক্ষণ করে। ওই সময় পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র সংঘাতের কারণে এসব মানুষ ঘরবাড়িছাড়া হয়। তবে তারা আবারও নিজ স্থানে ফিরে আসতে পেরেছে কিনা, সে হিসাব আইডিএমসির কাছে নেই। তারা জানায়, এ কারণে ২০১৭ সালে মোট অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি চার লাখ ৩২ হাজার দেখানো হলেও পরবর্তী বছর তা চার লাখ ২৬ হাজার দেখানো হয়।

ইমেইল বার্তায় আইডিএমসি জানায়, ১৯৭০ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র সংঘাতের ঘটনা ঘটে। ওই সংঘাতের সময়ই বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ঘটে। ২০০৯ সাল পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, পাহাড়ে দুই লাখ ৭৫ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। তারা আর নিজ ভূমিতে ফেরত আসতে পেরেছে কিনা, তার কোনো প্রমাণ আইডিএমসির কাছে নেই। ফলে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পাহাড়ে বাস্তুচ্যুতের সংখ্যা দুই লাখ ৭৫ হাজারই হিসাব করে আসছে আইডিএমসি।

আইডিএমসি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুতের সংখ্যাও প্রকাশ করে থাকে। তাদের হিসাবে নদীভাঙন, জলোচ্ছ্বাস বা ঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ২০২৪ সালে ২৪ লাখ দুই হাজার বাংলাদেশি অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে।
_সমকাল