হিমেল হাওয়া আর মিষ্টি রোদের শীতকাল অনেকেরই প্রিয় ঋতু। কিন্তু এই ঋতুর সৌন্দর্যে ছন্দপতন ঘটায় শুষ্ক ত্বক আর মাথার খুশকি। শীত এলেই যেন মাথায় খুশকির রাজত্ব শুরু হয়। কালো পোশাকে বা কাঁধের ওপর সাদা সাদা খুশকি পড়ার দৃশ্য যেমন অস্বস্তিকর, তেমনি এটি লোকলজ্জার কারণও হয়ে দাঁড়ায়।
শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা কমে যাওয়ার ফলে মাথার ত্বক বা স্ক্যাল্প অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যায়। এতে মৃত কোষগুলো ঝরে পড়তে শুরু করে, যা আমরা খুশকি হিসেবে দেখি। তবে চিন্তার কিছু নেই, জীবনযাপনে সামান্য পরিবর্তন আর কিছু ঘরোয়া টোটকাতেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
শীতে খুশকি দূর করতে কী করবেন, তা নিয়ে আজকের আয়োজন।
নারিকেল তেল ও লেবুর রস
খুশকি দূর করতে নারিকেল তেল ও লেবুর রসের মিশ্রণ বহু পুরনো ও পরীক্ষিত টোটকা। নারিকেল তেল মাথার ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে এবং লেবুর সাইট্রিক অ্যাসিড ফাঙ্গাস দূর করতে সাহায্য করে।
ব্যবহারবিধি: ২ টেবিল চামচ নারিকেল তেল হালকা গরম করে তাতে ১ চামচ লেবুর রস মেশান। এই মিশ্রণটি মাথার ত্বকে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। ২০-৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২-৩ বার এটি ব্যবহার করতে পারেন।
টক দইয়ের জাদুকরী গুণ
টক দই প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে এবং খুশকি তাড়াতে বেশ কার্যকর।
ব্যবহারবিধি: টক দই ভালো করে ফেটিয়ে নিন। এরপর চুলের গোড়ায় ও পুরো চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি চুলকে শুধু খুশকিমুক্তই করবে না, বরং করবে রেশমি ও উজ্জ্বল।
মেথির ব্যবহার
অবাধ্য খুশকি দূর করতে মেথি দারুণ কার্যকরী।
ব্যবহারবিধি: আগের রাতে ২ চামচ মেথি পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে মেথি বেটে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টের সঙ্গে সামান্য টক দই মেশাতে পারেন। মিশ্রণটি মাথায় লাগিয়ে ১ ঘণ্টা রাখুন, তারপর ধুয়ে ফেলুন।
অ্যালোভেরা জেল
শীতে মাথার ত্বকে অনেক সময় চুলকানি হয়। অ্যালোভেরা এই চুলকানি ও জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে।
ব্যবহারবিধি: তাজা অ্যালোভেরা পাতা থেকে জেল বের করে সরাসরি স্ক্যাল্পে লাগান। ১৫-২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বককে ঠান্ডা রাখে এবং আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
অলিভ অয়েল ম্যাসাজ
শীতে স্ক্যাল্পের রুক্ষতা দূর করতে অলিভ অয়েল বা জলপাই তেলের জুড়ি নেই।
ব্যবহারবিধি: ঘুমানোর আগে হালকা গরম অলিভ অয়েল চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করুন। সারা রাত রেখে সকালে শ্যাম্পু করে নিন। এতে স্ক্যাল্পের শুষ্কতা দূর হবে।
কিছু জরুরি সতর্কতা ও টিপস
ঘরোয়া উপাদানের পাশাপাশি কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করা জরুরি:
গরম পানি এড়িয়ে চলুন: শীতে আরামের জন্য আমরা চুলে গরম পানি ব্যবহার করি। কিন্তু অতিরিক্ত গরম পানি মাথার ত্বকের প্রাকৃতিক তেল (Sebum) ধুয়ে ফেলে, যা খুশকি বাড়ায়। তাই গোসলে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন।
নিয়মিত চুল আঁচড়ানো: নিয়মিত চুল আঁচড়ালে স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং প্রাকৃতিক তেল পুরো চুলে ছড়িয়ে পড়ে। তবে অন্যের চিরুনি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
প্রচুর পানি পান করুন: বাইরে থেকে ময়েশ্চারাইজার লাগানোর পাশাপাশি ভেতর থেকে শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা জরুরি। শীতে পানি পানের পরিমাণ কমে যায়, যা ত্বক ও চুল রুক্ষ করে তোলে। তাই পর্যাপ্ত পানি ও শাকসবজি খান।
ভেজা চুল দীর্ঘক্ষণ রাখবেন না: ভেজা চুলে বেশিক্ষণ থাকলে ফাঙ্গাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। তাই গোসলের পর দ্রুত চুল শুকিয়ে নিন।
কখন ডাক্তার দেখাবেন?
সাধারণত ঘরোয়া যত্নেই খুশকি দূর হয়। তবে যদি দেখেন মাথার ত্বক অতিরিক্ত লাল হয়ে যাচ্ছে, প্রচণ্ড চুলকানি হচ্ছে কিংবা চাকা চাকা হয়ে চামড়া উঠছে—তবে এটি 'সেবোরিক ডার্মাটাইটিস' হতে পারে। এমন ক্ষেত্রে দ্রুত চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
এই শীতে একটু বাড়তি যত্ন নিন, আর খুশকিকে বলুন বিদায়। আপনার চুল হোক ঝলমলে ও প্রাণবন্ত!




Comments