Image description

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বিক্ষোভে ওসমান হাদির ওপর হামলাকারীদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার এবং দ্রুত বিচারের দাবি জানানো হয়।

দেশের বিভিন্ন স্থানে শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেল থেকে এসব বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়।

ঢাকা (শাহবাগ)
ওসমান হাদির ওপর হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে ঢাকার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী বিভিন্ন সংগঠন। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নেতারা অভিযোগ করেন, এই হামলার পেছনে ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদী ও ফ্যাসিস্ট শক্তির’ প্রভাব রয়েছে। তারা অবিলম্বে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
একই দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও (ঢাবি) বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ‘সন্ত্রাসবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’-এর ব্যানারে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই কর্মসূচি পালিত হয়। শিক্ষার্থীরা হত্যাচেষ্টায় জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু)-এর উদ্যোগে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে চাকসু ভিপি ইব্রাহিম রনি অভিযোগ করেন, ওসমান হাদির ওপর হামলাটি ছিল সুপরিকল্পিত। হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা না হলে রাজপথে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
বিকেল সাড়ে ৪টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কাজলা গেট হয়ে তালাইমারী মোড়ে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, ওসমান হাদির ওপর হামলাকারীদের দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে। তারা দ্রুত অপরাধীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

ঝালকাঠি
ওসমান হাদির ওপর হামলার খবরে তার নিজ জেলা ঝালকাঠিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিকেল ৪টার দিকে ঝালকাঠি–বরিশাল আঞ্চলিক মহাসড়কের কলেজ মোড় এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলা এই অবরোধে মহাসড়কে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এতে বরিশাল ও খুলনাগামী রুটের দূরপাল্লার বাসসহ শতাধিক যানবাহন আটকে পড়ে এবং যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন।

বরিশাল
বরিশাল নগরীর অশ্বিনী কুমার হলের সামনে ‘সর্বস্তরের জুলাই যোদ্ধা’র ব্যানারে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বক্তারা হাদির ওপর গুলির তীব্র নিন্দা জানিয়ে হামলাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।

মানিকগঞ্জ
সন্ধ্যায় মানিকগঞ্জ শহরের শহীদ রফিক চত্বর থেকে ‘বিপ্লবী মঞ্চ’-এর উদ্যোগে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে প্রেসক্লাব চত্বরে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। বক্তারা হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।

মাদারীপুর
সন্ধ্যা ৭টার দিকে মাদারীপুর শহরের মুক্তমঞ্চ থেকে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে সদর থানার সামনে গিয়ে শেষ হয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, একজন প্রার্থীকে লক্ষ্য করে এই হামলা দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল করার একটি পাঁয়তারা। জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার না করা হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন তারা।

নড়াইল
সন্ধ্যা ৭টার দিকে নড়াইল শহরের পুরাতন বাস টার্মিনাল এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। মিছিল শেষে এক সমাবেশে বিক্ষোভকারীরা অবিলম্বে ওসমান হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি করা সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও দ্রুত বিচারের দাবি জানান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া
সন্ধ্যায় জেলা মসজিদ রোড প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার একটি মিছিল বের হয়ে প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সমাবেশে বক্তারা এই হামলাকে ‘টার্গেট কিলিং’ উল্লেখ করে বলেন, ওসমান হাদির ওপর হামলা মূলত দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত। তারা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দ্রুত বিচার নিশ্চিতের আহ্বান জানান।

লক্ষ্মীপুর
রাত ৮টার দিকে লক্ষ্মীপুর শহরের চক বাজার এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ছাত্র-জনতা। মিছিলটি বাজার সড়ক প্রদক্ষিণ করে উত্তর তেমুহনীতে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে বক্তারা দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। 

উল্লেখ্য, আজ দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকায় হাদির ওপর গুলি চালায় দুর্বৃত্তরা। মাথায় গুলিবিদ্ধ হাদিকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গুলিটি তার মাথার ডান দিক দিয়ে ঢুকে বাম কানের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেলেও এর দুই-একটি অংশবিশেষ এখনো মস্তিষ্কের ভেতরে রয়ে গেছে। গুলিবিদ্ধ হাদির নিউরোর অভিজ্ঞ সিনিয়র চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার করেছেন।

এর আগে তার সিটিস্ক্যান করা হয়। সেখানে দেখা যায়, ছোট ছোট দুই-একটি প্রিলেট মানে ছোট পুঁতি থেকেও আরও ছোট ধাতব বলের অস্তিত্ব। অস্ত্রোপচারের সময় সেই রকম একটি প্রিলেট বের করা হয়েছে। আরও দুই-একটি ব্রেনের মধ্যে আছে। এই গুলির কারণে রোগীর ব্রেনের প্রেসার অনেক বেড়ে গিয়ে রক্তক্ষরণ হয়। রক্তক্ষরণ বন্ধের পাশাপাশি প্রেসার কমিয়ে আনার জন্য অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। অস্ত্রোপচার শেষে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।