সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আবুল কালাম আজাদ। তিনি সরকারি চাকরির সুবাদে অবৈধ উপায়ে শুধু স্ত্রী-সন্তানের নামেই নয়, সম্পদ গড়েছেন শ্যালকের নামেও। উপার্জিত অর্থকে বৈধতা দিতে শ্যালকের নামেই এক কোটি ২৮ লাখ টাকায় দুটি গাড়ি ক্রয় করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে দুদক পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক শহিদুল আলম সরকার এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, গতকাল বুধবার বিকেলে ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও তার শ্যালক জামাল উদ্দিন ফকিরের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে সহকারী পরিচালক সাধন চন্দ্র সূত্রধর বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এতে শ্যালক জামাল উদ্দিন ফকিরকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।
অভিযুক্ত পিআইও আবুল কালাম আজাদ পাবনা জেলার সুজানগর থানার হাসামপুর গ্রামের শমসের আলী মিয়ার ছেলে ও শ্যালক জামাল উদ্দিন ফকির একই উপজেলার হাকিমপুর নতুনপাড়া গ্রামের আফতাব উদ্দিন ফকিরের ছেলে।
দুদক সূত্র জানায়, পিআইও আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের বিষয়ে অভিযোগ ওঠায় প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। প্রাথমিক অনুসন্ধানে তার শ্যালক জামাল উদ্দিন ফকিরের নামে অস্বাভাবিক সম্পদের তথ্য পান দুদক কর্মকর্তারা।
পরে ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর তার নামে সম্পদ বিবরণী নোটিশ জারি করে সংস্থাটি। এ প্রেক্ষিতে ওই বছরের ৮ ডিসেম্বর ৩২ লাখ ৪৬ হাজার টাকা মূল্যের স্থাবর ও এক কোটি ৩৩ লাখ ১১ হাজার ১৮২ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য প্রদান করেন। এ সম্পদ বিবরণী অনুসন্ধানকালে জামাল উদ্দিন ফকিরের নামে ৩২ লাখ ৪৬ হাজার টাকা মূল্যের স্থাবর ও এক কোটি ৫৯ লাখ ৪০ হাজার ১৮২ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। ফলে প্রতীয়মান হয় যে, তিনি কমিশনে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ২৬ লাখ ২৯ হাজার টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন। যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অনুসন্ধানকালে আসামি জামাল উদ্দিন ফকিরের নামে দুদক মোট এক কোটি ৯১ লাখ ৮৬ হাজার ১৮২ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জনের তথ্য পায়। কিন্তু এ সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তার নামে ঋণ ও দায়-দেনার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। একই সময়ে তার পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় পাওয়া যায় ২৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এতে তার অর্জিত সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় দুই কোটি ১৯ লাখ ৮১ হাজার ১৮২ টাকা। তবে এ সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তার গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় এক কোটি ১০ লাখ ৭ হাজার টাকা। সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে প্রতীয়মান হয় যে, তিনি অসাধু উপায়ে এক কোটি ৯ লাখ ৭৪ হাজার ১৮২ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগ দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
অপরদিকে, আসামি আবুল কালাম আজাদ অবৈধ আয় দ্বারা তার শ্যালক আসামি জামাল উদ্দিন ফকিরের নামে ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকায় একটি প্রিমিও গাড়ি ও ৯৬ লাখ টাকার একটি জীপ গাড়ি ক্রয়ে সহযোগিতা করেছেন। যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এরআগে চলতি বছরের ১১ মার্চ পিআইও আবুল কালাম আজাদ, তার স্ত্রী মর্জিনা খাতুন ও ছেলে ফজলে রাব্বি রিয়ানের বিরুদ্ধে আরও পৃথক তিনটি মামলা করে দুদক। ওই মামলায় আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে এক কোটি ৩২ লাখ ৪৬ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, স্ত্রী মর্জিনা খাতুন এক কোটি ৫৬ লাখ ৮৩ হাজার ৪৮৩ টাকা ও ছেলে ফজলে রাব্বি রিয়নের নামে এক কোটি ১৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯৪১ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগ দখলে রেখেছেন। যা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জনে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এদিকে বিস্ময়কর এই অঢেল সম্পদের রহস্য জানতে পিআইও আবুল কালাম আজাদের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে খুদে বার্তা দিয়েও তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
Comments