প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষাবিষয়ক শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার অন্তত পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসূচি থেকে এ দুই বিষয়ে শিক্ষক পদ পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে সংগীত বিভাগের আয়োজনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পরে সভায় সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান প্রিয়াঙ্কা গোপ স্মারকলিপি পাঠ করেন।
সভায় সংগীত বিভাগের শিক্ষক আজিজুর রহমান তুহিন বলেন, সভ্যতা বেঁচে আছে শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে ভর করে। প্রাথমিকে সংগীত শিক্ষকের পদ বাতিলের সিদ্ধান্ত আগামী প্রজন্মের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করবে।
সংগীতশিল্পী শায়ান বলেন, আগে আমরা প্রতিবাদের গান গাইতাম, এখন গান গাওয়াটাই প্রতিবাদ। একটি চক্র সংগীত ও ধর্মকে মুখোমুখি করার চেষ্টা করছে। তাদের ফাঁদে পা না দিয়ে বরং কারণে-অকারণে গানে গানে উত্তর দিন।
থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ঈস্রাফিল শাহীন বলেন, সংস্কৃতি কখনও ধর্মের বিরোধিতা করে না। শুধু ধর্ম দিয়ে একটি রাষ্ট্রের বিকাশ সম্ভব নয়।
ডাকসুর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য হেমা চাকমার অভিযোগ, আমরা গণমাধ্যমে দেখেছি, একটা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর চাপের কারণে সংগীত কিংবা শারীরিক শিক্ষা বাতিল করা হচ্ছে। এটি কাম্য নয়।
সভায় আরও বক্তৃতা করেন নৃত্যকলা বিভাগের শিক্ষক লাবণী বন্যা ও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের শিক্ষক কামাল চৌধুরী।
একই দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সংগীত বিভাগ ভাস্কর্য চত্বরে প্রতিবাদ সভা করে। পরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি মিছিল গান গেয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে।
সভায় সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান অণিমা রায় বলেন, প্রাথমিকের শিশুদের সুর থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ছিল সংস্কৃতির জন্য; ধর্মের জন্য নয়। প্রাথমিকে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা শিক্ষক পদ পুনর্বহাল না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে প্রতিবাদ সভা করেন সংগীত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তারা প্রাথমিকে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা শিক্ষক পদ পুনর্বহালসহ পাঁচ দফা দাবি জানান। বক্তৃতা করেন সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী জারিন সুভা, প্রত্যাশা চাকমা, মেহবার হোসেন, জাকিরুল ইসলাম জসিম প্রমুখ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেন সংগীত এবং শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বক্তৃতা করেন সংগীত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শায়লা তাসনীম, শিক্ষার্থী জাহিন বিশ্বাস এষা, শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইয়াসির আরাফাত বিজয়, স্বপ্না আক্তার প্রমুখ।
সিরাজগঞ্জে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছেন সংগীত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। একাডেমিক কার্যালয় থেকে একটি মিছিল ঢাকা-নগরবাড়ী মহাসড়কের বিসিক বাসস্ট্যান্ড মোড় ঘুরে ক্যাম্পাসে সমাবেশ করে। এতে বক্তৃতা করেন সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক দেবশ্রী দোলন, শিক্ষার্থী তনুশ্রী মোহন্ত প্রমুখ।
গত ২৮ আগস্ট জারি করা ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা ২০২৫’-এ সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা শিক্ষক পদ ছিল। তবে ২ নভেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশোধিত প্রজ্ঞাপনে এ দুটি পদ বাদ দেওয়া হয়।




Comments