Image description

রাজধানীর কলাবাগানে স্ত্রীকে হত্যা করে ফ্রিজে ভরে রাখার ঘটনায় মামলা দায়ের করেছেন নিহত নারীর ভাই। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, বাবার বাড়ির ১০ কাঠা সম্পত্তি স্বামীকে লিখে না দেওয়ায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।

নিহত নারী তাসলিমা আক্তারের বড় ভাই নাজমুল হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, ঘটনার পর থেকে প্রধান অভিযুক্ত তাসলিমার স্বামী নজরুল ইসলাম পলাতক রয়েছেন। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলের দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গের সামনে কথা হয় নিহত তাসলিমার বড় ভাই নাজমুল হোসেনের সঙ্গে। 

তিনি বলেন, আমার বোনের স্বামী নজরুল ইসলাম আগে কাপড়ের ব্যবসা করতেন। এরপর তিনি ব্যবসা-বাণিজ্য ছেড়ে দেন। বর্তমানে তিনি কিছুই করেন না। নিজের সম্পত্তি যা ছিল, সব বিক্রি করে দিয়েছেন। এরপর আমার বোনকে চাপ দিতে থাকেন আমাদের গাজীপুরের পূবাইল এলাকা থেকে তাকে ১০ কাঠা জমি লিখে দিতে হবে। আমরা তাকে সম্পত্তি লিখে দিতে রাজি ছিলাম না। বলেছি তিন ভাগ্নি ও আমার বোনকে পাঁচ কাঠা জায়গা লিখে দেব। কিন্তু তিনি সেটা মানেননি। আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন।

গতকাল (সোমবার) সকালে নজরুল আমার দুই ভাগ্নিকে জানান তাদের মা (তাসলিমা) অন্য আরেকজনের সঙ্গে পালিয়ে গেছে। বলেন, তোমরা খুঁজে দেখো, তোমাদের মা বাসায় নাই। সব জায়গায় খোঁজাখুঁজির পর নজরুলের রুমে গিয়ে আমার বড় ভাগ্নি রক্ত দেখতে পায়। এরপর তিনি বাচ্চা দুটোকে তাদের ফুফুর বাসায় রেখে আসে।

গতকাল দুপুর ২টার দিকে তাদের ফুফু আমাকে ফোন দিয়ে জানান, আপনার বোনের মনে হয় কোনো সমস্যা হয়েছে, দ্রুত ঢাকায় আসেন। আমি গাজীপুর থেকে বিকেলের দিকে এসে আমার দুই ভাগ্নিকে নিয়ে কলাবাগান থানায় যাই। এরপর পুলিশ বাসায় যায়।

বাসার দরজা বন্ধ ছিল। সেটি দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও নজরুল বা আমার বোন কাউকে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে ফ্রিজ খোলার পর দেখা যায় অনেকগুলো মাছ-মাংসের নিচে লাশ লুকানো রয়েছে। এটা দেখার পর আমি বেহুঁশ হয়ে যাই।

নাজমুল হোসেন আরও জানান, তার বোনকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দিতেন না স্বামী নজরুল। বড় ভাগ্নি এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পর তাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করা হয়। এরপর থেকে তার লেখাপড়া বন্ধ। মেজো ভাগ্নি ক্লাস সিক্সে পড়ে তারও লেখাপড়া বন্ধ। আর ছোট ভাগ্নি আমাদের কাছে গাজীপুরে থাকে। সে ক্লাস ওয়ানে পড়ে।

নাজমুল অভিযোগ করে বলেন, জমি তার নামে লিখে না দেওয়ার কারণেই আমার বোনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে হাত-পা বেঁধে ডিপ ফ্রিজের মধ্যে রেখে দেন নজরুল। আমার বোনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। 

এ ঘটনাায় হওয়া মামলার বাদী তাসলিমা আক্তারের ছোট ভাই নাঈম হোসেন এজাহারে উল্লেখ করেন, ২০০৪ সালে পারিবারিক ভাবে নজরুল ইসলামের (৫২) সঙ্গে আমার বোনের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে নাজনীন আক্তার (১৯), নাজিফা ইসলাম (১৪) এবং নিশাত আনজুম (৫) নামে তিন কন্যা রয়েছে। বিগত পাঁচ-ছয় বছর যাবৎ নজরুল ইসলাম পারিবারিক কলহের কারণে আমার বোনকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে একাধিকবার আমাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। 

গত জুন মাস থেকে নজরুল ইসলাম ঢাকায় তার বাসায় আমার বোনকে বন্দি করে রাখে এবং নির্যাতন করে। আমাদের পরিবারের সঙ্গে বোনকে এবং তার কন্যাদের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়। গত ২১ সেপ্টেম্বর বোনজামাই নজরুল ইসলাম আমাদের পূবাইলের বাড়িতে এসে বোনের নামে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি তার নিজের নামে লিখে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। আমরা তাতে অসম্মতি জানালে সে রাগ করে পরিবারসহ ঢাকায় ফিরে যায় এবং পরে বোন ও ভাগ্নিদের সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ করতে দেয়নি। বোনকে পরকীয়ার অপবাদ দিয়ে তাকে কোনো মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দিত না। এমনকি ঘরের বাইরে গেলে বাইরে থেকে দরজা লক করে যেত।

এ বিষয়ে কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফজলে আশিক জানান, আমরা গতকাল রাতে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বাসায় থাকা ডিপ ফ্রিজ থেকে হাত-পা মুখ বাঁধা অবস্থায় ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করি। পরে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠাই।

তিনি আরও জানান, এই ঘটনায় নিহতের ভাই কলাবাগান থানায় একটি মামলা (মামলা-৩) দায়ের করেছেন। আসামি নজরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করতে পারলেই ঘটনার মূল রহস্য জানা যাবে। তাকে ধরার জন্য আমাদের অভিযান চলছে।