Image description

আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে মাথা গোঁজার একমাত্র ঠাঁই। ধ্বংসস্তূপের মাঝে এখন শুধুই হাহাকার। বুধবার দুপুরে কড়াইল বস্তির পোড়া ভিটায় দাঁড়িয়ে চোখের পানি মুছছিলেন এক নারী। পোড়া আবর্জনার ভেতর খুঁজছিলেন ছেলের জামা। কান্নারত কণ্ঠে তিনি বললেন, “খালি ছাদ দেখছেন, এখানে আমার ঘর ছিল। সব পুড়ে শেষ। পরনের কাপড় ছাড়া কিছুই নেই।”

মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর কড়াইল বস্তির বউবাজার এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রায় দেড় হাজার ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। নিঃস্ব হয়ে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছেন হাজারো মানুষ।

বস্তির বাসিন্দারা জানান, আগুন এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল যে, আসবাবপত্র বা মূল্যবান সামগ্রী বের করার কোনো সুযোগ পাননি তারা। অনেক ঘরেই নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার ছিল, যা আগুনের লেলিহান শিখায় ভস্মীভূত হয়েছে।

চা দোকানি আবু তাহের ধ্বংসস্তূপের ছাই হাতড়ে খুঁজছিলেন জমানো টাকা। তিনি জানান, ঋণ পরিশোধের জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ক্যাশবাক্সে রেখে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন। আগুনে তার দোকান, জমানো টাকা এবং ৩০টি ঘর—সবই পুড়ে গেছে। পাওয়া গেছে শুধু কিছু পোড়া কয়েন।

স্বামীহারা মিনা আক্তারের গল্পটা আরও করুণ। সামান্য আয়ে সন্তানকে মাদ্রাসায় পড়ান তিনি। বললেন, “বেতন পাই আট হাজার টাকা। ঘরভ ভাড়া আর ছেলের পড়ার খরচ দিয়ে হাতে কিছুই থাকে না। আগুনে ঘরের সব শেষ, নতুন করে কিছু কেনার সামর্থ্য আমার নেই।”

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বউবাজার বস্তির ‘ক’ ব্লকের মিন্টু মিয়ার বাড়ি থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। কেউ বলছেন সিলিন্ডার লিকেজ, আবার মিন্টু মিয়ার মেয়ে আসমা আক্তারের দাবি—বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে আগুন লেগে পরে সিলিন্ডারে ছড়িয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে আসমার মা নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানান তিনি।

ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার জানান, অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, গৃহহীন এসব মানুষের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ব্যক্তি। ক্ষতিগ্রস্তদের রান্না করা খাবার, পানি সরবরাহ এবং অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে মাথার ওপর ছাদ হারানো এই মানুষগুলোর চোখেমুখে এখন শুধুই অনিশ্চয়তার ছাপ।