Image description

মহান বিজয় দিবসে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় চরম বিশৃঙ্খলা ও অবমাননার চিত্র দেখা গেছে। শহীদদের পবিত্র গণকবরের ওপর জুতা পায়ে উঠে সেলফি তোলা এবং ‘টিকটক’ ভিডিও বানানোর উৎসবে মেতেছিলেন অনেক দর্শনার্থী। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে এমন দৃশ্য দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল।

মঙ্গলবার প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শ্রদ্ধা জানানোর পর স্মৃতিসৌধ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এরপরই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের ঢল নামে। কিন্তু শ্রদ্ধা নিবেদনের আনুষ্ঠানিকতার আড়ালে সাধারণ মানুষের একাংশের খামখেয়ালিপনায় পদদলিত হয় বীর শহীদদের গণসমাধিস্থল। এমনকি কবরের ওপর উঠে ছবি তোলা ও ভিডিও বানানোর মতো নিন্দনীয় ঘটনাও ঘটে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মূল বেদীতে ফুল দেওয়া ও শ্রদ্ধা জানানোর শৃঙ্খলা রক্ষায় স্মৃতিসৌধ কর্তৃপক্ষের কর্মীরা মাইক ও বাঁশি নিয়ে তৎপর ছিলেন। তবে স্মৃতিসৌধ চত্বরের ভেতরে থাকা গণকবরগুলোর (গণসমাধি) নিরাপত্তা বা পবিত্রতা রক্ষায় তেমন কোনো নজরদারি দেখা যায়নি। এই সুযোগে অনেক দর্শনার্থী না বুঝেই গণকবরের ওপর উঠে পড়েন। কেউ কেউ জুতা পায়ে কবরের ওপর দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, আবার কেউ কেউ সেখানে দাঁড়িয়েই বানাচ্ছেন টিকটক ভিডিও।

সাংবাদিকরা এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে কয়েকজন দর্শনার্থী দাবি করেন, তারা জানতেন না যে এটি গণকবর বা এখানে ওঠা নিষেধ। আবার কেউ কেউ ভুল স্বীকার করে বলেন, “ভুল হয়েছে, আর এমন হবে না।”

পবিত্র স্থানে এমন আচরণের তীব্র নিন্দা জানিয়ে স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক আজহার আলী বলেন, “এ কেমন আচরণ! গণকবরের ওপর উঠে লোকজন নাচানাচি করছে, অথচ কেউ কিছু বলছে না। এটা কর্তৃপক্ষের নজরদারির চরম গাফিলতি।”

স্থানীয় বাসিন্দা সজিব আহাম্মেদ বলেন, “বিজয় দিবসের মতো দিনে এমন পবিত্র স্থানে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ কেবল অসচেতনতা নয়, এটি শহীদদের প্রতি চরম অবমাননা। গণকবরগুলোর মর্যাদা রক্ষায় কর্তৃপক্ষের কঠোর হওয়া উচিত ছিল।”

এ বিষয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধের দায়িত্বপ্রাপ্ত গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন আনু বলেন, “প্রত্যেকটা কবরের সামনে লেখা ছিলো 'এখানে উঠা নিষেধ'। কিন্তু অনেকে সেটাও তুলে ফেলেছে। আমরা নিষেধ করার পরেও অনেকে এটার উপরে উঠে যায়। আমরা চেষ্টা করেছি এগুলো নিয়ন্ত্রণ করার। কিন্তু এখানে যারা দর্শনার্থী আসেন, তাদের নিজেদেরই বেশি সচেতন হতে হবে।”